৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথ

মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়ান। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। এ ছাড়া নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম ও লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ। শপথ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত  ছিলেন। সংক্ষিপ্ত আয়োজনে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শপথ নিতে বিকাল ৪টার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার এক ঘণ্টা পর একে একে প্রবেশ করেন নুরুজ্জামান, তারানা হালিম ও ইয়াফেস ওসমান। সাড়ে ৫টার দিকে প্রবেশ করেন আসাদুজ্জামান কামাল। এদিকে নতুন পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথের পর দপ্তর বণ্টনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন নূরুল ইসলাম বিএসসি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন নূরুজ্জামান আহমেদ। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ব্রাজিল থেকে গম আমদানি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন। অন্যদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তারানা হালিম। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার পর এই মন্ত্রণালয়ে ৯ মাস ধরে কোন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ছিল না। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ইয়াফেস ওসমানের দপ্তরের বদল হয়নি। কামাল এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন ইয়াফেস ওসমান। প্রেসিডেন্টের কাছে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসায় ভার কমেছে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। গত ৯ই জুলাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর খন্দকার মোশাররফ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পাশাপাশি আগের দপ্তর প্রবাসী কল্যাণের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছিলেন। নতুন করে পাঁচ জনকে নিলেও পুরনো কাউকে বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দপ্তরও বদলাননি কারও। এর আগে গত বছরের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরপর একই বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গত বছরের ১২ই অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ ৯ই জুলাই বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। নতুন মন্ত্রী যোগ হওয়া মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা ৩২, উপদেষ্টা ৫, প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা ২০ জন এবং দুই জন উপ-মন্ত্রী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রিসভার মোট সদস্য ৫৯ (উপদেষ্টা ও উপ-মন্ত্রীসহ) জন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সানোয়ারা গ্রুপের মালিক ও এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয়। এ কারণেই তাকে মন্ত্রিত্বের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নতুন টিএন্ডটি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার নিকটাত্মীয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও নাম কুড়ান। তারানা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ এবারই প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আঞ্চলিকতার কোটায় তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বলে মনে করা হয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী’র দেয়া অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। প্রেসিডেন্টের কাছে শপথ নেয়ার পর নুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, দেশ ও জাতিকে কিছু দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। চেষ্টা করবো জনগণকে ভাল কিছু দেয়ার। বড় ধরনের কোন চ্যালেঞ্জ দেখছি না। যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল, আমি এগিয়ে যেতে চাই। তিন বছর যথেষ্ট সময়। তিন বছরে ভালমতো এগিয়ে যেতে পারবো বলে আশা করছি। প্রতিমন্ত্রী হওয়াকে নারীর বিজয় হিসেবে মনে করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম। শপথ নিয়ে তিনি বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের বলেন, এটা নারীর ক্ষমতায়নের বিজয়। শিল্প আমার অন্তরের বিষয়, আর এটা বিশ্বাসের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেননি, এটা প্রমাণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে আমার শ্রম, মেধা, শিক্ষা সব কিছু দিয়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করবো। নতুন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করবো। সচেতনভাবে এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই। মন্ত্রী হিসেবে আগের মতোই ‘সিনসিয়ারলি’ কাজ করার কথা জানিয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, অনুভূতির খুব পরিবর্তন হয়নি। কারণ আগে যে কাজ করেছি, এখনও সে কাজই করবো। আগে সিনসিয়ারলি কাজ করেছি, এখনও সিনসিয়ারলি কাজ করবো। নতুন করে তো আর পাখা গজাবে না। প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হওয়াকে পুরস্কার মনে করছেন কি না- জানতে চাইলে ইয়াফেস বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলিনি মন্ত্রী করতে হবে। তিনি ভাল মনে করছেন, তাই এটা করছেন। প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব বেশি অনুভব করছেন কি না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, দায়িত্ব বাড়া বা কমার বিষয় নয়। আরও সতর্ক থাকার জন্য এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমার ছায়ার মতো সঙ্গে ছিলেন। এখনও তিনি আমাকে গাইডলাইন দেবেন। চ্যালেঞ্জের মধ্যেই তো ছিলাম, আগে যা করেছি, এখনও তাই করবো।

No comments

Powered by Blogger.