ব্রাজিলের গমে অনীহা দুদকের!

ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ এখনই অনুসন্ধান করতে চায় না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির মাসিক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মহাপরিচালক শাসছুল আরেফিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানালেন। এ সময় দুদকের পরিচালক নূর মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ বেলাল হোসেন এবং উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৯ জুন জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন আইনজীবী পাভেল মিয়া। গত ৮ জুলাই আদালতের পর্যবেক্ষণসহ রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। আদেশে বলা হয় ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মধ্যে যে অংশ ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, তা থেকে কেউ ফেরত দিতে চাইলে সরকারকে ফেরত নিতে হবে।
আর এখনো বিতরণ না হওয়া গম কাউকে জোর করে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আজ আপিল আবেদন করলে হাইকোর্টের আদেশ ২৬ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই স্থগিতাদেশ দেন এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।
দুদকের সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক বলেন, ‘উচ্চ আদালতে এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। এ ছাড়া সরকারের দু’একটি সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে আমরা পর্যালোচনা করে দেখব।’ এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমরা চাপে নেই। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’
সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়ার পরও মামলা হচ্ছে না কেন?—সাংবাদিকেদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন দুদক কর্মকর্তারা। পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এটা পর্যালোচনা করছি।’
দুদকের পরিচালকের কাছ থেকে এমন উত্তর পেয়ে সাংবাদিকেরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘মামলা অনুমোদনের পরে তো পর্যালোচনার সুযোগ নেই। কারণ পর্যালোচনা করেই তো মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ ‘এটা কমিশনের বিষয়’ বলেই তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বিদেশে অর্থপাচার অনুসন্ধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক শামছুল আরেফিন বলেন, ‘অনুসন্ধানের শুরুতে বিদেশ থেকে তথ্য পেতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য প্রয়োজন, প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেলেই অনুসন্ধানে গতি পাবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও এমডির নিয়োগ দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রসঙ্গে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে দুদক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট চার হাজার ৩২৯টি অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৫৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছে। এ সময়ে মোট ১৮২টি মামলার অনুমোদন ও ২৮২টি চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে মোট ১০১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে সাজা হয় ৩৪টি মামলায় এবং খালাস পায় ৬৭টি মামলার আসামিরা।
দুদকের মামলায় অধিকাংশ আসামির খালাস প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ‘পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে অনেক সময় মামলার আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তাদের কোনো অদক্ষতা কিংবা গাফিলতির অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি।’

No comments

Powered by Blogger.