‘হামার ঈদ নদীত গেছে বাবা’ by সিদ্দিক আলম দয়াল

‘হামার ঈদ নদীত গেছে বাবা। ঘরত চাউল নাই, খাবার নাই, তিনবেলা খাবার জোটে না। সবায় মিলি একটা ছাপড়ার নিচে কোন মতো মাথা গুঁজে থাকি। ঘর নাই, বাড়ি নাই, ঠায়ঠিকানা নাই- হামার এবার ঈদের কোন চিন্তা নাই। জুটলে খামো, না জুটলে নাই।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বললেন তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী ভয়াবহ ভাঙনের শিকার গৃহহীন পরিবারের কর্তা মহসিন মিয়া। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৪০টি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা, পোড়ারচর, গাইবান্ধা সদরের কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারী, ঘাগোয়া, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, খলাইহরা, উড়িয়া, গুনভরি, রতনপুর, সিংড়িয়া, ফুলছড়ি, কামারপাড়া, সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি, হলদিয়া, সাঘাটাসহ ৪০টি পয়েন্টের ভাঙন এলাকার অন্তত ২ সহস্রাধিক পরিবার পথে বসেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধেও জায়গা নেই। নদীর ভয়াবহ ভাঙনে মসজিদ, মন্দির, জনপদ, জায়গা জমি যমুনার গ্রাসে বিলীন হচ্ছে। ফুলছড়িতে সরিয়ে নেয়ার জায়গা না থাকায় দুটি মন্দিরসহ অনেক ঘরবাড়ি নিরাপত্তাহীনভাবে নদীর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
অনেকেই বাড়িঘর হারিয়ে স্কুলপড়ুয়া শিশু, শ্বশুর, জামাই, বউ, শাশুড়ি, ভাইবোন নিয়ে একই ঘরে রাত কাটাচ্ছে। ফলে প্রায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। ভয়াবহ ভাঙনের এ চিত্র গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কামারপাড়া ও গণকবর এলাকায়। ভাঙন প্রতিরোধে কাজ হলেও মুহূর্তেই তলিয়ে যাচ্ছে পাউবোর বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ। ফুলছড়ির গণকবর এলাকা থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় মাসখানেক থেকে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর জমিজমাসহ নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েছে দুটি মন্দির, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাকি জনপদ। ভাঙনের শিকার গ্রামবাসী জানান, মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকার নদীর পারেই রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। আবার কিছু এলাকায় সারা রাত জেগে পাহারা দেয় লোকজন, কখন ভেঙে নিয়ে যায় তাদের ঘরবাড়ি। বাধ্য হয়ে জামাই, শ্বশুর, শাশুড়ি, মেয়ে সবাই একটি ডেড়ায় রাতযাপন করছে এলাকার শতাধিক পরিবার। ফুলছড়ি উপজেলার খলাইহারা গ্রামের মহসিন মিয়ার বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় বাঁধে গিয়ে জায়গা পায়নি। তাই আবারও নদী থেকে ১০ গজ দূরে ছাপড়া তুলেছেন।
ঈদ নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। তিন সস্তান ও স্ত্রী ফাতের জন্য কিছু কিনতে পারেনি। তিনি বলেন, ঘর তোলার চিন্তায় আছি। একই অবস্থা নদীভাঙনের শিকার প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের। তাদের মধ্যে কোন ঈদের আনন্দ নেই। তারা ঘর সরিয়ে নেয়া এবং ঠাঁই গড়ে তোলার চিন্তায় দিশেহারা। সে কারণে তাদের মধ্যে ঈদ নিয়ে কোন ভাবনা নেই।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, কাজটা আগে শুরু হলে হয়তো ভাঙন রোধ সম্ভব ছিল। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকে দায়ী করে বলেন, তারা শুধু টাকা পানিতে ফেলছে। ভাঙন রোধ করতে পারছে না।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা নদীভাঙন এলাকায় ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছি। নগদ টাকাও দিয়েছি, যাতে তাদের সমস্যায় পড়তে না হয়।

No comments

Powered by Blogger.