হকার থেকে জিনের বাদশা by নুরুল আমিন ও শাহ মোস্তফা কামাল

জিনের বাদশা বাবুলের সঙ্গে দেখা করতে হলে প্রথমেই পাগলা ডেকচিতে ঢালতে হয় ৩৬১ টাকার নজরানা। এরপর সংগ্রহ করতে হয় সিরিয়াল টোকেন। সিরিয়ালম্যান নাম হাঁকানোর পর পাওয়া যায় জিনের বাদশা বাবুল দর্শনের অনুমতি। সেই অনুমতি পেলেই দর্শানার্থীরা লাভ করেন নতুন অভিজ্ঞতা। জিনের বাদশা বাবুল মিয়া (৩০)কে পুলিশ একটি ধর্ষণ মামলায় আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে আসে তার বিচিত্র কায়দায় প্রতারণার বিষয়। সে জীবনের শুরুতে ছিল হকার। সেখান থেকে এখন সে জিনের বাদশাহ। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বহুল আলোচিত-সমালোচিত বাবুল মিয়া। বাড়ি জগন্নাথপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত নিজাম উদ্দিন। বখাটে বাবুল প্রথমে সিনেমার টিকিট কালোবাজারি করতো। এর সঙ্গে রেলস্টেশন এলাকায় চুরি-ছিনতাইও করতো। কিছুদিন পর এ ব্যবসা বদল করে হকারি ব্যবসায় মনোনিবেশ করে বাবুল। এতে আয় কম থাকায় নামের সঙ্গে শাহ এবং চিশতী লাগিয়ে ঝাঁড়-ফুক, তাবিজ-কবজ বিক্রি শুরু করে। এ ব্যবসা আলোর মুখ দেখতে শুরু করলে বাবুল কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যায়। ৩ মাস পর এলাকায় এসে নিজেকে তান্ত্রিক জগতের সাধক বলে প্রচার চালায়। সে এবং তার লোকজন প্রচার করে, বাবুলকে জিনে কামরূপ কামাখ্যা নিয়ে গিয়েছিল। এখান থেকে তিনি (বাবুল) জিনের বাদশাহী হাসিল করেছেন। এ অবস্থা চলার পর বাবুল নিজস্ব লোক দিয়ে গঠন করে প্রচার ও লাঠিয়ালবাহিনী। স্থানীয় মানুষ জনকে গরু জবাই করে খাওয়ানো পর সমাজে বাবুলের বিষয়ে নমনীয়তা দেখা দেয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজ গ্রামে বহুতল ভবনে বাবুল গড়ে তুলে প্রতারণার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাবুলের আধ্যাত্মিকতার খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকেন তার আস্তানায়। এখানেই সূচিত হয় বাবুলের নতুন ব্যবসা। বর্তমানে বাবুল কোটিপতি। ভুক্তভোগীরা জানান, ৩৬১ টাকা পাগলা ডেকে সর্মপণ করে জিনের বাদশা বাবুলের কাছে যাওয়ার পর পুরুষ রোগীকে কামরূপ কামাখ্যার তাবিজ-কবজ, পানিপড়া দিয়ে বিদায় করা হয়। এর জন্য ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। মহিলা রোগী হলে প্রথমে তার ওপর জিনের আছর ফেলা হয়। দাবিকৃত টাকা না দিলে জোর করে ক্যামেরায় বন্দি করা হয় ওই নারীর নগ্ন ছবি। ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা,স্বর্ণালংকার আদায় করে সে। বাবুলের এসব ব্যবসায় প্রধান কাঁচামাল হিসেবে প্রবাসীর স্ত্রী, স্বামী পরিত্যক্তা ও স্কুল-কলেজের যুবক-যুবতী উল্লেখযোগ্য। গত ১০ই জুন ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার চরকালিবাড়ি গ্রামের মেহেদী হাসানের স্ত্রী সুবর্ণা দাশ (ধর্মান্তরিত) বাবুলের আস্তানায় গিয়ে যথারীতি ধর্ষিত হন। জিনের বাদশা বাবুল কর্তৃক ধর্ষিতা সুবর্ণা দাশ শায়েস্তাগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর সংশোধিত ৩ এর ৯(১) মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলকে ১১ই জুন আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বাবুল প্রতারক ও ঠকবাজ। এলাকায় সে জিনের বাদশা বলে পরিচিত। প্রতারক বাবুলের প্রতারণার নানা কাহিনীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.