রাজস্ব আদায়ে ন্যূনতম শর্ত পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ -মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট

বাংলাদেশ ২০১৫ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে ন্যূনতম আর্থিক স্বচ্ছতা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে ‘এফওয়াই ২০১৫ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি’ বা অর্থ বছর ২০১৫ রাজস্ব খাতের স্বচ্ছতা শীর্ষক রিপোর্ট। যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে তাদের ওপর এ রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে মার্কিনিরা জানতে পারেন তাদের ট্যাক্সের টাকা কোথায় কোথায় কিভাবে খরচ হচ্ছে। যথাযথভাবে তাদের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় হচ্ছে কিনা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাজেট নথিপত্রের পূর্ণাঙ্গতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও তা জনগণের কতটা হাতের নাগালে এসব মূল্যায়ন করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে সরকার কন্ট্রাক্ট ও লাইসেন্সের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে তাও এর আওতায় আনা হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোট ১৪০টি দেশের ওপর ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি দেশই রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতার ন্যূনতম মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ন্যূনতম রাজস্ব অগ্রগতির স্বচ্ছতা পূরণের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে ৯টি দেশে। বাজেট যেহেতু প্রকাশ্য এবং তাতে খরচ ও রাজস্বের খাতগুলো ভেঙে ভেঙে দেখানো হয়েছে, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ ও তা থেকে আয় দেখানো হয়েছে সামষ্টিক আকারে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যে আয় হয় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সম্পূরক বাজেটে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দের তথ্য তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সরকারের নির্বাহী অফিসগুলোতে খরচের খাত অন্তর্ভুক্ত হয়নি বাজেটে। এ খাতের খরচের অংক উল্লেখযোগ্য পরিমাণের কিনা তা এখানে স্পষ্ট নয়। একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সরকারের বার্ষিক আয় বিবরণী সর্বোচ্চ অডিটকারী প্রতিষ্ঠান জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি এবং তা যাচাইও করেনি। যে প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের লাইসেন্স ও কন্ট্রাক্ট দেয়া হয় তা আইনে ও বিধিবিধানে গুরুত্ব দিয়ে বলা আছে। এক্ষেত্রে মৌলিক তথ্যগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের কথা বলা আছে। বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ, তা থেকে আয় এবং নির্বাহী অফিসগুলোতে খরচের খাতকে আরও বিস্তারিতভাবে দেখানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতায় অগ্রগতি আনতে পারে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অডিটকারী প্রতিষ্ঠান সরকারি আর্থিক বিবরণীর অডিট প্রকাশের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনতে পারে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা হলো সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাজারে আস্থা তৈরিতে সহায়তা করে তা। এর মাধ্যমেই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি নির্মিত হয়। রাজস্ব খাতের স্বচ্ছতার জন্য সরকার যদি তার নাগরিকদের বাজেট দেখার সুযোগ করে দেয় তাহলে তাতে সরকারেরই জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, যেসব দেশ মার্কিন সরকারের সাহায্য পায় তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্ষিক রিভিউ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে মার্কিন জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা যাচাই এবং এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে। ২০১৫ অর্থবছরে যেসব দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম মানদণ্ড মেটাতে পেরেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী সে দেশগুলো হলো- আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহামা, বেলিজ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, বোতসোয়ানা, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, বার্কিনা ফাসো, ক্যাবো ভারডি, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, এস্তোনিয়া, ফিজি, জর্জিয়া, ঘানা, গ্রিস, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরাইল, জ্যামাইকা, জর্ডান, কেনিয়া, কসোভো, কিরগিজস্তান, লাতভিয়া, লেসোথো, লিথুয়ানিয়া, মেসিডোনিয়া, মালয়েশিয়া, মালটা, মারশাল আইল্যান্ড, মৌরিতাস, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনেগ্রো, মরোক্কো, নামিবিয়া, নেপাল, পানামা, পাপুয়া নিউ গিনি, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রোয়ান্ডা, সামোয়া, সেনেগাল, সার্বিয়া, সিয়েরা লিয়ন, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, তিমোর-লেসটি, টোগো, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগো, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভিয়েতনাম ও জাম্বিয়া।

No comments

Powered by Blogger.