কারখানা সংস্কারে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ চায় বিজিএমইএ by এমএম মাসুদ

তাজরীন ফ্যাশন্সে আগুন ও রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাক কারখানাগুলো সংস্কারে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। সেই সংস্কারে সরকারের কাছে সহজ শর্তে ১৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধা চেয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমএই। কারখানা সংস্কারের ব্যয়ের একটি খসড়া হিসাব অর্থমন্ত্রীর কাছে দিয়েছে সংগঠনটি। তাতে কারখানাপ্রতি ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ৩ হাজার ২০০ কারখানা সংস্কারে ১৬ হাজার কোটি টাকার দরকার পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, কারখানা সংস্কারের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে দূর করতে হচ্ছে স্থাপত্য দুর্বলতা। নিশ্চিত করতে হচ্ছে অগ্নি নিরাপত্তাও। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত সচল কারখানা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২০০টি। উত্তর আমেরিকার ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্সের মূল্যায়নে কারখানাগুলোয় ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এর মধ্যে অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ত্রুটিই সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামো ত্রুটিও। অন্যদিকে ইউরোপীয় ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড কারখানাগুলোর ত্রুটি চিহ্নিত করেছে ৫০ হাজারের বেশি। এসব ত্রুটি সংশোধনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই আমদানি করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সংস্কার কার্যক্রমে ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, একেকটি কারখানা সংস্কারে উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম আড়াই থেকে ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ কারণে সরকারের কাছে আমরা বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রত্যাশা করছি। সূত্র জানায়, এ বিষয়টি ক্রেতাজোটগুলোর হিসাবেও উঠে এসেছে। অ্যালায়েন্স তাদের তালিকায় থাকা কারখানার প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে সংস্কারে সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি ধারণা দিয়েছে। তাদের দাবি, ত্রুটি সংশোধনে কারখানাপ্রতি খরচ হবে গড়ে ২ কোটি টাকা। এ হিসাবে সক্রিয় ৩ হাজার ২০০ কারখানা সংস্কারে প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠার ফলেই দেশের পোশাক কারখানাগুলোয় রয়েছে প্রাণঘাতী ত্রুটি। স্থাপত্য দুর্বলতার কারণে ভাড়াবাড়িতে গড়ে তোলা কারখানা স্থানান্তরে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। আবার নিজস্ব ভবন হলে সংস্কারের মাধ্যমে সব ধরনের ত্রুটি দূর করতে হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তন থেকে শুরু করে অগ্নি প্রতিরোধক ও মজবুত স্থাপত্য ব্যবস্থার জন্য বিপুল অঙ্ক ব্যয় করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। নতুন করে নিজস্ব জমিতে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তুলতেও বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন।
এদিকে ক্রেতারা কারখানার ত্রুটি চিহ্নিত করলেও প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানে এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ পোশাক শিল্প মালিকদের। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আজিম বলেন, ক্রেতাদের পক্ষ থেকে দুই-একজন পেলেও, সার্বিকভাবে কোন ঋণ বা অর্থসহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাজোট তাদের প্রতিশ্রুতি যত দ্রুত বাস্তবায়ন করবে, ততই ভাল। কারণ এরই মধ্যে উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কোন উৎস থেকে কম সুদে এ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাজোট ঋণ সুবিধার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি শর্তও জুড়ে দিচ্ছে। সংস্কার কার্যক্রমের সরঞ্জাম কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। অন্যদিকে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) একটি বিশেষ ঋণ সুবিধার ঘোষণা দিলেও কঠিন শর্তের কারণে অনেকেই তাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, তৈরী পোশাক কারখানা কমপ্লায়েন্ট করতে স্বল্প সুদে ঋণ এখন সময়ের দাবি। কারণ আন্তর্জাতিক মানের কমপ্লায়েন্ট কারখানা গড়তে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। অনেক কারখানা মালিকই অর্থাভাবে এ কার্যক্রম হাতে নিতে পারছেন না। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারি মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৫৫টি কারখানার পরিদর্শন শেষ হয়েছে। অর্থাৎ আরও প্রায় ১ হাজার কারখানা পরিদর্শন বাকি রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.