উড়ালসড়কের চেয়ে বেশি জরুরি জলাবদ্ধতা নিরসন -চট্টগ্রামে বেলার গণশুনানিতে সুশীল সমাজ

উড়ালসড়ক নির্মাণের চেয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা চট্টগ্রামের জন্য বেশি জরুরি। কিন্তু জনস্বার্থের কথা না ভেবে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মহাপরিকল্পনাকে (মাস্টারপ্ল্যান) পাশ কাটিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে নগরে উন্নয়ন হওয়ায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হয়েছে।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক এক গণশুনানিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রকৌশলীদের বক্তব্যে এসব মতামত উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গতকাল শনিবার সকালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম নগরের লর্ডস ইন হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এই গণশুনানি হয়। এতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষও জলাবদ্ধতা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। অনেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়রকে পরামর্শও দেন।
অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা ও এখতিয়ার দিয়ে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন করা সম্ভব নয়। করপোরেশনের প্রধান তিনটি কাজ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাট মেরামত ও নগর আলোকিত করা। যন্ত্রপাতিসহ নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে হয়।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দর খান, স্থপতি জেরিনা হোসাইন, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী, কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার, মনোয়ারা বেগম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২টি করণীয় বিষয় উল্লেখ করেন দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-খাল খননের পাশপাশি সেখানে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। জোয়ারের পানি ঠেকাতে স্লুইসগেট নির্মাণ করতে হবে। পুকুর ভরাট বন্ধ করার পাশাপাশি পাহাড় কাটা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে একেক বিশেষজ্ঞ একেক ধরনের পরামর্শ দেন। নগরে ৩৩টি খাল রয়েছে। অনেকগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, গণমাধ্যম শুধু নেতিবাচক বিষয় তুলে আনে। সমালোচনা করে। ভালো কাজকে গুরুত্ব দেয় না। তিনি বলেন, যিনি যত বড় প্রভাবশালী, তিনি তত বেশি আইন অমান্য করেন। বিলবোর্ড উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও করপোরেশনের লোকজন বিলবোর্ড ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু কাউকে ছাড় না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোনো মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হয় না। মাস্টারকার্ডের আলোকে নতুন করে কার্যকর পরিকল্পনা করা যায় কি না, ভেবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান বলেন, অনেকেই নালায় ময়লা ফেলে। জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্য কাজের পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
স্থপতি জেরিনা হোসাইন বলেন, উড়ালসড়কের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা। সেটি না হওয়ায় এখন জ্যৈষ্ঠ মাসের বৃষ্টিতেও মানুষের বাসাবাড়িতে পানি ওঠে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।
শুনানিতে অধ্যাপক সিকান্দর খান, স্থপতি জেরিনা হোসাইন ও প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের সমালোচনা করেন। এসব উড়ালসড়ক জনস্বার্থে কার্যকর হচ্ছে না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.