জন্মদাতাই জবাই করল ৩ কন্যাকে by জহিরুল ইসলাম

ফুলের নামে নাম। চম্পা, শিউলি ও বেলী। মূল নামের শেষে সুগন্ধি এ তিন ফুলের নাম জুড়ে দিয়ে মা ফাতেমা বেগম তিন শিশুকন্যার নাম রেখেছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা চম্পা, শিরো জান্নাত শিউলি ও সারাবান তহুরা বেলী। কিন্তু প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পাষণ্ড পিতার ক্রোধের বলি হয়ে অকালেই ঝরে পড়ল জীবনবৃন্ত থেকে। ধারাল দা দিয়ে একজন একজন করে ফুলের মতো তিনটি মেয়েকে জবাই করেছে জন্মদাতা পিতা আবদুল গণি (৪০)। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের নিদান তরানী চৌধুরীপাড়ায়। এ রাতে ফাতেমা বাড়িতে ছিলেন না। তিন মেয়েকে খুন করার পর গণি পালিয়ে গেছে।
গণির স্ত্রী ফাতেমার অভিযোগ, ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্বামী তিন কন্যাকে জবাই করল শিশুকন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করেছে। তাদের আরেক সন্তান ছেলে রিফাত নানার বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একজন বাবা এভাবে নিজের হাতে তিন-তিনজন সন্তানকে হত্যা করতে পারে তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এলাকাবাসী, প্রতিবেশী ও স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরের ভাষ্য, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার সময় আবদুল গণি তার তিন শিশুকন্যা চম্পা (১১), শিউলি (৮) ও বেলীকে (১৮ মাস) ধারাল দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করে পালিয়ে যায়। কক্সবাজার সদর সার্কেলের এএসপি মাসুদ আলম শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বদরখালী নৌপুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই আবদুল আওয়াল সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। আবদুল গণিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
পুলিশ জানায়, আবদুল গণি রিকশাচালক ও দিনমজুর। ঘর ছাউনির কাজও করত। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দা উদ্ধার করা হয়েছে। গণির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মা ফাতেমা বেগমের ভাষ্য, গণির সঙ্গে সাতকানিয়ায় বসবাসরত তার বড় ভাই নুরুল মোস্তফার স্ত্রী রাশেদার দুই বছর ধরে পরকীয়া চলে আসছে। মোস্তফা দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। ভাবীর সঙ্গে গণির পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। দেড় বছর আগে বদরখালীর স্থানীয় এক ইউপি সদস্য সাতকানিয়ায় গিয়ে গণিকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিল। কয়েক মাস ধরে গণি আবারও ওই পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে ফাতেমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আসছিল। এ নিয়ে বদরখালীর ইউপি সদস্য খায়রুল বাশারের কাছে নালিশ করেন ফাতেমা। এতে গণি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
ফাতেমার মা নুর আয়েশা জানান, ইউপি মেম্বারের কাছে নালিশ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার আবদুল গণি প্রকাশ্যে ফাতেমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ পরিস্থিতিতে খায়রুল বাশার পরদিন সালিশ বৈঠক ডাকার কথা বলে ফাতেমাকে বৃহস্পতিবার রাতে তার মায়ের বাড়িতে থেকে যেতে বলেন।
ফাতেমার মা বলেন, আবদুল গণি রাতে আমার মেয়েকে বাড়িতে না পেয়ে আমার তিন নাতনিকে জবাই করেছে। শুধু তাই নয়, হত্যার পর গণি রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার ছেলে আজগর আলীকে ফোন করে তার তিন মেয়েকে খুন করার খবরও জানায়। তখন সবাই গিয়ে দেখি তিন নাতনির গলাকাটা ও রক্তমাখা শরীর বিছানায় পড়ে আছে।
ফাতেমা বেগম জানান, তার বড় ছেলে রিফাত (১৪) নানাবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত। এ কারণে সে বেঁচে গেছে। রিফাত সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র, আয়েশা সিদ্দিকা চম্পা ও শিরো জান্নাত শিউলি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত।
এদিকে রেদোয়ান নামে গণির প্রতিবেশী এক যুবক ভাবীর সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

No comments

Powered by Blogger.