‘মানবিক বিপর্যয় রোধে আসিয়ানের সব সদস্যকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’

সমুদ্রপথে মানবিক বিপর্যয়ঃ দিনের পর দিন অর্ধাহারে-অনাহারে
কাটিয়ে, অমানবিক মানসিক-শারীরিক নির্যাতন
সমুদ্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার অভিবাসীদের রক্ষা করতে অবশ্যই আসিয়ানভুক্ত সব সদস্য দেশকে কাজ করতে হবে। তা না হলে এ সংকট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ানের চেয়ারম্যান নাজিব রাজাক। এ ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল তাকে ফোন করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন। জবাবে নাজিব রাজাক তাকে বলেছেন, এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। এক্ষেত্রে সব দেশকে অবশ্যই একসঙ্গে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এটা শুধু আসিয়ান জোটের জন্য একটি সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক একটি মানবিক সংকট। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে শুধু জাতিগত রোহিঙ্গা বলে তাদের দায় শুধু মালয়েশিয়া নিতে পারে না। এ সমস্যা তার দেশের ভেতর থেকে সৃষ্টি হয় নি। তার ভাষায়, যারা সমুদ্রে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন, তাদের অনেকে মারা গিয়েছেন, তাদের প্রতি রয়েছে তার সহানুভূতি। তাদের অনেককে মালয়েশিয়া তার ভূমিতে অবতরণ ও মানবিক সহায়তা দিয়েছে।  এখনও এই অঞ্চলে কয়েক হাজার এমন অভিবাসী আছেন। তাদের দায় শুধু মালয়েশিয়া নিতে পারে না। এ জন্য তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমানকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি যেন মিয়ানমার সরকারকে এই বার্তা পৌঁছে দেন। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার প্রত্যাশা করেন নাজিব রাজাক। গতকাল মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইনে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল মেলানা ইনদাহ ফাসা ১ পিপলস হাউজিং প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে নাজিব রাজাক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সমুদ্রপথে যাওয়া এসব অভিবাসীর সমস্যা শুধু আসিয়ান নেতাদের উদ্বেগের বিষয় নয়। এটা আঞ্চলিক ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোটের মতো আন্তর্জাতিক নেতাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, আসিয়ানের মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে আমাদের। সে জন্যই আসিয়ানভুক্ত অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। এরপরও যখন সুনির্দিষ্টভাবে এ সমস্যাটির বিস্তার ঘটছে এবং এর প্রভাব পড়ছে অন্য আসিয়ানভুক্ত নেতাদের ওপর ও এর বাইরেও তখন অন্যপক্ষগুলোর সহযোগিতা নিয়ে আসিয়ান ফোরামে এর সমাধান খুঁজতে হবে। গতকাল সকালে তাকে ফোন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন। এ সময় বান-কি মুন তার কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। নাজিব রাজাক সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু এই শরণার্থীবিষয়ক সমস্যাটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ তাই তারা এ ব্যাপারে একটি ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আমি আশাবাদী। তাদের এই অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতায় রূপ নেয়ার আগে আমাদেরকে কিছু একটা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আসিয়ান নেটওয়ার্কের আওতায় এ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তাতে যে সমাধান বেরিয়ে আসবে আশা করি মিয়ানমার সরকার তাকে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখবে না। কারণ, মানবিক ট্র্যাজেডি এড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি আমরা। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে সভা আহ্বান করা প্রয়োজন কিনা। জবাবে নাজিব রাজাক বলেন, বেশ কয়েকটি পন্থা নিয়ে কাজ করছে মালয়েশিয়া। ঠিক এই মুহূর্তে মিয়ানমার সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আমরা লিয়াজোঁ করছি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে আমি আসিয়ানের অন্য সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। যদি জাতিসংঘ সহায়তার প্রস্তাব দেয় তাহলে তা জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (এইএনএইচসিআর) এর মাধ্যমেই তা করা হবে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন মিয়ানমারের এক লাখ ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসী। তবে এ অবস্থায়ও মালয়েশিয়া এসব মানুষকে আবাসন সুবিধা ও তাদের মানবিক সমস্যা সমাধান দিচ্ছে না বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বিরাট ভূমিকা রেখেছে, যদিও দেশটি এ সমস্যার উৎস নয়।

No comments

Powered by Blogger.