অ্যাসাঞ্জ, স্নোডেন ও ম্যানিংয়ের ভাস্কর্য

বার্লিনের আলেক্সান্ডারপ্লাৎসে ‘এনিথিং টু সে?’
বা ‘কিছু কি বলার আছে?’ শিরোনামে অভিনব শিল্পকর্মে
অ্যাসাঞ্জ, স্নোডেন ও ম্যানিংয়ের ভাস্কর্যের পাশে
দাঁড়িয়ে কথা বলছেন এক আন্দোলনকর্মী।
নীরবতার অর্গল ভাঙুক। সবাই বলে উঠুক যার যার মনের কথা। দেশ ও দশের শত সমস্যাই হোক কিংবা একেবারেই নিজস্ব কোনো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা, বলে ফেলুন। এই বার্তা নিয়েই জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সম্প্রতি উন্মোচিত হয়েছে একটি ভ্রাম্যমাণ ভাস্কর্য। নাম ‘এনিথিং টু সে?’ বা ‘কিছু কি বলার আছে?’। অভিনব এই ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই কালের তিন আলোচিত মানুষ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, এডওয়ার্ড স্নোডেন ও ব্র্যাডলি ম্যানিংকে।
চারটি চেয়ারের একটি কাঠামোর ওপর প্রমাণ আকারের তিনটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য নিয়ে এই শিল্পকর্ম। তিনটি চেয়ারের ওপর দাঁড় করানো হয়ে এই তিনজনের মূর্তি। মাঝখানে অ্যাসাঞ্জ, দুই পাশে স্নোডেন ও ম্যানিং। আর তাঁদের ডানদিকের চেয়ারটি ফাঁকা। ওই চেয়ারটিই আমজনতার জন্য উন্মুক্ত বেদি। যে কেউ চাইলে ওই বেদিতে উঠে দাঁড়িয়ে খালি গলায় কিংবা হ্যান্ডমাইক নিয়ে চিৎকার করে বলতে পারবেন না বলা কথাগুলো।
বার্লিনের নগরকেন্দ্রে আলেক্সান্ডারপ্লাৎসে পয়লা মে মোড়ক উন্মোচন করা হয় এই ভ্রাম্যমাণ ভাস্কর্যটির। ইতালীয় ভাস্কর ডেভিড ডোরমিনোর এই শিল্পকর্ম উদ্বোধনী দিনেই বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। অ্যাসাঞ্জ, স্নোডেন ও ম্যানিংকে নীরবতা ভাঙার প্রতীক হিসেবেই বেছে নিয়েছেন ভাস্কর ডোরমিনো। মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতেই তাঁদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁদের পাশে ফাঁকা থাকা চতুর্থ চেয়ারটিই ভাস্করের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,‘ওই চতুর্থ চেয়ারটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলেই এখানে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর নিজের কথা বলতে পারেন।’
বার্লিনে ভাস্কর্যটি উন্মোচনের পর পরই অনেক অ্যাকটিভিস্ট এবং সাধারণ পথচারীও নগর চত্বরে রাখা এই ভাস্কর্যের চেয়ারের বেদিতে উঠে মানুষের সামনে নিজের মনের কথা খুলে বলেছেন। কেউ কেউ চেয়ারে উঠেই শুরু করেছেন তুমুল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, সমাজ-সংসারের নানা বেড়াজাল ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে দিয়েছেন জ্বালাময়ী ভাষণ। আবার কেউবা খুবই বিনয়ের সঙ্গেই কোনো কিছুর বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেমে গেছেন মাথা নিচু করেই। এমনকি শিশুরাও অভিনব এই প্রতিবাদী শিল্পকর্মে উৎসাহী হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে ওই খালি চেয়ারটিতে, কথা বলেছে সামনে উপস্থিত জনতার সঙ্গে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কূটনৈতিক নথিপত্র প্রকাশ করে দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিং। এখন দেশটির একটি সামরিক কারাগারে ৩৫ বছরের জেল খাটছেন তিনি। এই কারাদণ্ডের পরপরই ম্যানিং জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই নারীত্বের অনুভূতি নিয়ে বড় হয়ে উঠেছেন এবং এখন থেকে তিনি নারী হিসেবেই পরিচিত হতে চান। পরে চেলসিয়া এলিজাবেথ ম্যানিং নাম ধারণ করেন তিনি। অবশ্যই এই ভাস্কর্যে তাঁকে সেনা সদস্যের পরিচিত রূপেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে দিয়ে আলোচনায় আসেন অস্ট্রেলীয় প্রকাশক ও সাংবাদিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস নামে তাঁর ওয়েবসাইটেই প্রথম প্রকাশ করা হয় ওই সব নথিপত্র। আটক এবং হস্তান্তরের ভীতিতে অ্যাসাঞ্জ এখনো লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রিত অবস্থায় আছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার স্পর্শকাতর নজরদারি প্রযুক্তি প্রকাশ করে দিয়ে ফেরারি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এখনো রাশিয়ায় অজ্ঞাতবাসে আছেন স্নোডেন।

No comments

Powered by Blogger.