মিলিব্যান্ড তখন বিজয় ভাষণ লিখছিলেন

বৃহস্পতিবার বৃটেন সময় রাত দশটার কিছুক্ষণ আগের কথা। লেবার পার্টি একের পর এক আসনে জিতে চলেছে। জয়টা ধরেই নিয়েছিলেন দলের সাবেক প্রধান এড মিলিব্যান্ড। দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের একটি গ্রামে নিজের নির্বাচনী এলাকায় তখন বিজয় ভাষণ লিখছিলেন তিনি। মিলিব্যান্ড হয়তো ধারণাও করেননি কয়েক ঘণ্টা বাদেই তিনি লিখবেন লেবার নেতা হিসেবে তার পদত্যাগপত্র। রাত যতই গভীর হতে লাগলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে লেবারকে টপকে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এগিয়ে চলেছে ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ দল। মিলিব্যান্ড তখন তার কৌশল প্রধান লর্ড উডকে নির্দেশ দেন শ্যাডো মন্ত্রিপরিষদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে। তা হলো তারা যেন রেডিও, টেলিভিশনে বিজয়সূচক কোন বক্তব্য না দেন। এর আগে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে ইতিবাচক সংবাদই পেয়েছেন মিলিব্যান্ড। শুভেচ্ছা বার্তায় সিক্ত হচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল সরকার গঠন করতে প্রয়োজনীয় আসন পাবার পথে রয়েছে লেবার। পরবর্তীতে যখন এক্সিট পোলের ফলাফল সামনে আসে, স্তব্ধ হয়ে যান মিলিব্যান্ড। নিজের দু’হাতে মাথা ধরে, আর টেলিভিশনের দিকে চিৎকার করেন। এক্সিট পোলের পূর্বাভাস মানতে পারছিলেন না। বৃটেনের ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সে সময় কি পরিস্থিতি ছিল মিলিব্যান্ডের বাড়িতে। তার প্রেস প্রধান বব রবার্টস এ সময় সেখানে ছিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার কাছে লেবার প্রার্থীদের কাছ থেকে একের পর এক ফোন আসা শুরু করেছে। তারা হঠাৎই বুঝতে পারেন যে হারতে চলেছেন। এক লেবার কর্মকর্তা বলেন, তারপরও অনেকে নিজেদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে ফলাফলের পূর্বাভাস ছিল ভুল। রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওই ধারণা পাল্টাতে শুরু করে। টোরির প্রতি জনগণের সমর্থনকে ছোট করে দেখেছিলেন তারা। ফলে নির্বাচনের ফলে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে লেবার পার্টি। নির্বাচনে পরাজয়ের প্রভাব ওয়েস্টমিনিস্টরে দলটির সদর দপ্তরেও প্রভাব ফেলেছে ইতিমধ্যে।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যস্ত ক্যামেরন:
এদিকে, পুনঃনির্বাচিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তার দল কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচিত এমপিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো জোট গঠন ছাড়াই ক্যামেরন এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হওয়ার পর ক্যামেরন বেশ খোশমেজাজেই রয়েছেন। বিষয়টি তার কাছেও ছিল অপ্রত্যাশিত। বিবিসি’র খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে চ্যান্সেলর হিসেবে জর্জ অসবর্ণকে পুনঃনিয়োগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ফার্স্ট সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। টেরেসা মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ফিলিপ হ্যামন্ড পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাইকেল ফ্যালন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে থেকে যাচ্ছেন। জোট ভেঙে এককভাবে কনজারভেটিভ পার্টি সরকার গঠন করবে। ফলে, জোটভুক্ত লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের মন্ত্রীর আসনগুলোতে নিয়োগ পাবেন কনজারভেটিভ পার্লামেন্ট সদস্যরা। তাই  মন্ত্রিসভা গঠনে সপ্তাহান্তে বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কাটাতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। গতকাল চূড়ান্ত ভোটগণনায় ৩৩১টি আসন পায় ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৬ আসনের। ১৯৯২ সালের পর এতো বড় জয়ের ঘটনা এটাই প্রথম। জয়ের পর ‘এক জাতি’র জন্য কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন ক্যামেরন। কথা বলেছেন স্কটল্যান্ডে ব্যাপক বিজয় পাওয়া স্কটিশ জাতীয়তাবাদী দল এসএনপির নেতা নিকোলা স্টারজনের সঙ্গেও। অপরদিকে বিরোধী দলগুলোর নেতা এড মিলিব্যান্ড, নিক ক্লেগ এবং নাইজেল ফ্যারাজ নির্বাচনে ভরাডুবির পর পদত্যাগ করেছেন। ডেভিড ক্যামেরন যখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যস্ত, বিরোধী দলগুলো তখন মনোযোগী হচ্ছে নিজেদের নতুন নেতা নির্বাচনের দিকে।

No comments

Powered by Blogger.