এখনও আছে ঝিলের ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো by আল আমিন

ঢাকার রামপুরায় চৌধুরীপাড়ার মাটির মসজিদের পাশের ঝিলে প্রায় ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘর রয়ে গেছে। সরকারি খাসজমিতে ঝিলের ওপর অবৈধভাবে নির্মিত ওইসব ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন। বিচ্ছিন্ন করা হয়নি ওই ঘরগুলোতে লাগানো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইনগুলো। সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা আর হয়নি। বরং ঝিলের বামপাশে প্রায় অর্ধ একর জমি ভরাট করে একটি টিনের ঘর তুলতে দেখা গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গত দুইদিন আগে অভিযানের উদ্যোগ নেয়া হলে এতে রাজি হননি স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা। গত মাসে ঝিলে বাড়ি দেবে যাওয়ায় প্রাণহানির ঘটনায় ওই বাড়ির মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মনিরুজ্জামান ওরফে মনির চৌধুরীকে সোমবার রাতে কুমিল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এর আগে মনির রামপুরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছিলও না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল। ১৫ই এপ্রিল রামপুরার ১৯২/বি নম্বর মাটির মসজিদের পাশের ঝিলে অবৈধভাবে বাঁশ ও টিনের দিয়ে নির্মিত তৈরি একটি দোতলা ঘর দেবে যায়। ওই ঘটনায় শিশুসহ ১২ জন মারা যান। মারা যাওয়া অধিকাংশ মানুষ কেউ গামেন্টর্স কর্মী কেউবা দিনমজুর।
গতকাল সকালে ওই ঝিলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে ঘর দেবে গিয়ে প্রাণহানি হয়েছে ওই স্থানের একপাশে বাঁশের সাঁকো রয়েছে। আশপাশের প্রায় ৩৫টি ঘর এখানো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে ওই ঘটনার পর ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো থেকে সামান্য কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গেলেও অধিকাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ওইসব ঘরে বসবাস করছেন। জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি কোন তোয়াক্কা করছেন না। তবে তারা জানিয়েছেন অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা বসবাস করছেন। আশপাশের টিনসেডের বাড়িগুলোতে অনেক ভাড়া হওয়ার কারণে তারা কম টাকায় সেখানে থাকছেন। ডানপাশে ঝিলের ওপর নির্মিত একটি টিনের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, শামসুল হুদা নামে এক রিকশাচালক সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি জানালেন, ঝিলের ওপর বাড়ি দেবে যাওয়ার পরেই তারা নানা আতঙ্কে আছেন। বাধ্য হয়ে সেখানে থাকতে হচ্ছে। আমার দুই শিশু সন্তান এখানে থাকতে চাইছে না। তাদের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার পূর্ব-হাজীপাড়া এলাকায়। তার পাশের আরেকটি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি বাঁশ ও টিন দিয়ে  তৈরি। দুইটি ঘরে আশরাফুল নামে এক দিনমজুরের পরিবার গাদাগাদি করে থাকেন। তিনি জানালেন, ঝিলের ওপর ঘর হওয়ার কারণে মাঝে-মধ্যে হেলে যায়। এতে ভয় কাজ করে। বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রামপুরার পূর্ব-হাজীপাড়ায় অনেক টিনের ঘর আছে। ওই টিনের ঘরগুলোতে দুইরুমের ভাড়া ৮ হাজার টাকা। আর ঝিলে দুইরুমের ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা হওয়ায় তারা এখানে থাকেন। তাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই বলে জানান। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানা এলাকায়। ওই ঝিলের ওপর স্থানীয় যুবলীগ নেতা মনির ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি তুহিন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তুহিনের অপর সহযোগী স্থানীয় আরেক যুবলীগ নেতা শামীমুল রহমান শামীম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রামপুরা এলাকায় কোন কমিটি নেই। যে যার মতো পারছে তারমতো ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি আরও জানান, মনিরের দাপট এলাকায় অনেক বেশি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ঝিলে প্রাণহানির ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু, ওই কমিটি এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেননি। তিনি আরও জানান, ঝিলের জমিটি কার তা নির্ণয় করা হচ্ছে। ঢাকায় বিভিন্নস্থানে স্থানে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। ওই জমিটি কার সেটি নির্ণয়ের পর সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান জানান, ঝিলে ঘর দেবে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ হত্যার অভিযোগ এনে যুবলীগ নেতা মনিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। মামলাটি তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, মনিরের বাড়ি ও রামপুরা এলাকার বিভিন্নস্থানে তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ওই ঝিলে রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালালে পুলিশ সহযোগিতা করবে।

No comments

Powered by Blogger.