এ মুহূর্তে তারানকোর বাংলাদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই -মানবজমিনকে ড. মোমেন by মিজানুর রহমান

দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটে সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল তো বটেই সব দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেখতে চায় জাতিসংঘ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং মধ্যস্থতার চেষ্টায় সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন তার অধস্তন সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে এরই মধ্যে দায়িত্ব দিয়েছেন। সমপ্রতি অনুষ্ঠিত ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রকাশ্যে জাল ভোট, কারচুপি এবং ব্যাপক অনিয়মের বিষয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওই নির্বাচনটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অসন্তোষ প্রকাশ করে একটি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সেখানে তার মুখপাত্র একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা সম্পর্কে মহাসচিব অবগত রয়েছেন। চলমান সঙ্কট নিরসনে তিনি তারানকোকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ পাওয়া গেছে তার দ্রুত তদন্ত করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বান কি মুনের ওই প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পর ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে তারানকোর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়ে। তিনি শিগগিরই আসতে চান বলেও খবর বেরিয়েছে। সরকার এখন তাকে বাংলাদেশে আসতে দিতে চায় কি-না? সেই আলোচনাও আছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল তিনি টেলিফোন আলাপে মানবজমিনকে বলেন, আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে তারানকোর বাংলাদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই? তাছাড়া, তিনি যেখানে গেছেন সেখানে যে খুব সফল হয়েছেন এমনটিও নয়। তিনি ইউক্রেনে গেছেন সেখানে কিছুই করতে পারেননি। তিনি রাজনৈতিক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন বাংলাদেশে তার কিছু সফলতা আছে। সরকার ও বিরোধী দলকে অন্তত এক টেবিলে বসাতে পেরেছিলেন। সেটা তিনি ব্যাপক প্রচার করেন। তিনি আবারও বাংলাদেশের দায়িত্ব পেয়েছেন। মহাসচিব যাকে ইচ্ছা যে কোন দেশের পরিস্থিতি দেখভালে দায়িত্ব দিতে পারেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, মহাসচিব এবং তারানকো দুজনই ওই দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি বলেছেন। আমরা তা শুনেছি, এ পর্যন্তই। তিনি বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলছেন। আমার সঙ্গেও তার কথা হয়েছে। তবে তিনি এখনও বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য কোন আনুষ্ঠানিকভাবে দরখাস্ত করেননি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছেন কি-না এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, হ্যাঁ তিনি তো যেতে চান। তিনি মনে করেন ঢাকা সফরে প্রথমবারে তিনি কিছু সফল হয়েছেন। এবার আরও সফল হবেন। সরকার তাকে আসতে দেবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা দেখা হবে দরখাস্ত করার পর। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বান কি মুনকে ‘ইল এডভাইস’ করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সঠিক তথ্য আমরা তাকে জানিয়েছি। সেটি পাওয়ার পর মহাসচিব আগের অবস্থানে নেই বলেও দাবি করেন রাষ্ট্রদূত। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, জাতিসংঘ সমঝোতা চায়। কিন্তু সেটা তো পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে। সংবিধান মতে ওই নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে। সুতরাং এত আগে তারানকোকে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া, তিনি নিজে এত আগে যাবেনই বা কেন? কোন বিদেশীর কথায় বাংলাদেশের মতো ইকোনমিক পাওয়ার-এর দেশের আর কিছু হবে না বলে মন্তব্য করে মোমেন বলেন, আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। সিয়েরা লিওন আর বাংলাদেশ এক নয়।
সমপ্রতি দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, দুই নেত্রীর মধ্যে সরাসরি সংলাপের চেষ্টা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য দেয়ার অভিযোগও করেন তিনি। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে ওই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, আসলে জাতিসংঘ একটি সমঝোতা চায়। তারা সব দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চায়। জাতিসংঘের সেই চাওয়ায় বিএনপি যদি গোঁ-ধরে থাকে তা হলে আলোচনা হবে না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আলোচনায় আসতে হবে ওপেন মাইন্ড নিয়ে। সেখানে গিভ অ্যান্ড টেক হতে পারে। গোঁ-ধরলে চলবে না।

No comments

Powered by Blogger.