থাইল্যান্ডের জঙ্গলে দুদিনে ১২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার

থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের
কয়েকজন। এদের শংখলা প্রদেশের রাত্তাফুম জেলা
কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। গতকালের ছবি l রয়টার্স
থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে একটি পাহাড়সংলগ্ন জঙ্গল থেকে গতকাল শনিবার ৩২ বাংলাদেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার একই প্রদেশের জঙ্গলে মানব পাচারকারীদের ঘাঁটি থেকে ১১৭ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়, যাঁদের মধ্যে ৯১ জনই বাংলাদেশি। এ নিয়ে গত দুই দিনে দেশটির মালয়েশিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে মোট ১২৩ জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হলো। খবর ব্যাংকক পোস্ট, এএফপি ও রয়টার্সের।
ব্যাংকক পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল খাও কায়েউ পাহাড়সংলগ্ন এলাকা থেকে ৩২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। তাঁদের ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত দেখাচ্ছিল। সবাইকে উদ্ধার করে স্থানীয় বান খলোং স্কুলে নেওয়া হয়। সেখানে খাওয়া ও বিশ্রামের পর তাঁদের স্থানীয় রাত্তাফুম জেলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়। ওই শরণার্থী শিবিরে গত শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ১১৭ অভিবাসীকে রাখা হয়েছে।
শংখলা প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর একারাত সিসেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, শুক্রবার উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ২৬ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম। বাকি ৯১ জন বাংলাদেশি। তবে আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল পুথিচার্ট একাচান্টের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শুক্রবার মোট ১৯৯ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ জন রোহিঙ্গা ও ৫৮ জন বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘আমরা জানার চেষ্টা করছি, এঁরা স্বেচ্ছায় থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন, নাকি পাচারকারীদের শিকার হয়েছেন। পাচারকারীদের শিকার হলে তাঁদের সমাজ উন্নয়ন ও জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর নিজের ইচ্ছায় অবৈধভাবে এ দেশে প্রবেশ করে থাকলে অভিবাসন পুলিশের কাছে পাঠানো হবে। অভিবাসন পুলিশ তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।’
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার উদ্ধারের পর অভিবাসীদের রাত্তাফুম জেলা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অভিবাসী উদ্ধারের খবরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের জন্য পানি, ফলমূল ও বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন। গতকাল সেখানেই অভিবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ওই অভিবাসীদের মধ্যে আছে বাংলাদেশ থেকে আসা ১৩ বছর বয়সী বালক বুসরি সালাম। সে জানায়, একদল মানুষ নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে ঢোকে। দুই সপ্তাহ ধরে জঙ্গলে থেকে মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করছিল তারা। সালাম বলে, ‘আমার ভাই মালয়েশিয়ায় আছে। আমিও সেখানে যেতে চাই।’
থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল পুলিশের মুখপাত্র প্রায়ুত থাভর্নসিরি এএফপিকে জানান, মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৩৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ জনকে। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৫০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে থাই পুলিশের অভিযানে শংখলা প্রদেশের জঙ্গলে অন্তত ছয়টি ঘাঁটি ও সেখানকার কবর থেকে ৩২ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। খোঁজ পাওয়া যায় কয়েকটি কঙ্কালের। পাওয়া যায় বেশ কিছু কবরও। এরপর পুলিশি অভিযান আরও জোরদার করা হয়। ওই অভিযানের ধারাবাহিকতায় জীবিত এই অভিবাসীদের উদ্ধার করা হলো।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদনে মানব পাচারের চিত্র তুলে ধরে। ওই দিনই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিচ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানব পাচারের ঘটনা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনিয়মিত সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশায় ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে যাত্রা করছে হাজারো মানুষ।
সমন্বিত নেতৃত্বের অভাব: দক্ষিণ থাইল্যান্ডে জঙ্গল থেকে বেশ কিছু অভিবাসীর কঙ্কাল আবিষ্কারের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, মানব পাচার প্রতিরোধে আঞ্চলিক সরকারগুলোর মধ্যে সমন্বিত নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (এপিএইচআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধে আসিয়ান নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের সদস্য ও এপিএইচআরের চেয়ারপারসন চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, ঘটনা হলো, আসিয়ান নেতারা এই সংকট উপেক্ষা করছেন। এটি তিরস্কারযোগ্য।
গতকাল শনিবার এপিএইচআরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, থাইল্যান্ডে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা এও প্রমাণ করে, রোহিঙ্গারা দলে দলে দেশ ত্যাগ করছে। বিষয়টি উদ্বেগের। এটি শুধু মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ নয়। আরও বলা হয়, সহিংসতার শিকার হয়ে অন্য দেশে আশ্রয়প্রার্থী কিংবা হতদরিদ্র অভিবাসীদের অধিকার ও নিরাপত্তা অবশ্যই আঞ্চলিক সরকারগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.