সেনা মোতায়েন নিয়ে টালবাহানায় শঙ্কা বাড়ছে

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হওয়ার একদিন আগে দিনভর ব্যস্ত ছিলেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী ২০ দল সমর্থিত তাবিথ আউয়াল। গতকাল মালিবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও গুলশান-১ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে এলাকার ওইসব এলাকার  হাজার হাজার ভোটার যোগ দেন। এদিকে তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে প্রচারণায় যোগ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। এজন্য যে পরিবেশ দরকার সরকার তা নানাভাবে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। তবে যা কিছুই করা হোক না কেন তাদের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসবেন না বলেও জানান তিনি। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে প্রার্থীদের মেরে ফেলার এবং তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে মওদুদ অভিযোগ করেন। এ সময় তাবিথ আউয়াল বলেন, সর্বশেষ সেনা মোতায়েন নিয়ে যে টালবাহানা করা হলো, তাতে আমাদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল সকালে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের বস্তি ও কলোনিতে গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। এরপর সকাল সাড়ে আটটায় বাসে করে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ-সংলগ্ন ৮ নম্বর বস্তিতে যান। তিনি বস্তির ঘরে ঘরে গিয়ে বাস মার্কায় ভোট চান। এরপর সেখান থেকে তাবিথ রেললাইন-সংলগ্ন সেলিমের বস্তিসহ আশপাশের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোট ও দোয়া চান। এ সময় গণসংযোগকালে তিনি বলেন, আমরা জনগণের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। জনগণ আমাদের চাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাবো। নির্বাচিত না হলে ফলাফল মেনে নেবেন কি না-সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল যা-ই হোক, মেনে নেবো। এসব এলাকায় গণসংযোগ শেষে তাবিথ আউয়াল মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে আয়োজিত দুটি নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সকাল ১০টায় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং বেলা ১১টায় তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন।
মতমিনিময় শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের এ মেয়র প্রার্থী ‘বাস’ মার্কায় ভোট চাইতে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, পূর্ব খিলগাঁও, পশ্চিম খিলগাঁও, হাজীপাড়া, মগবাজার ওয়ারলেস গেট, ফার্মগেটের গ্রিন সুপার মার্কেট, আনন্দ সিনেমা হল এলাকা, ফার্ম ভিউ সুপার মার্কেট ও মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প ও গুলশান-১ এলাকায় গণসংযোগ করেন তাবিথ আউয়াল। প্রত্যেক এলাকায় ভোট চাইতে গেলে সেসব এলাকার বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা এসে যোগ দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে ওইসব এলাকার হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক তার সঙ্গে অংশ নেন। গণসংযোগকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনুর পাশা, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিকালে গণসংযোগ কর্মসূচির বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তেজগাঁও ক্যাথোলিক চার্চ পরিদর্শন করেন। ফার্মগেট এলাকায় গণসংযোগকালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু আমাদের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ৩৬ কমিশনার প্রার্থী হুমকি ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপন করে আছেন। তারা ভোটও চাইতে পারছেন না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসেরও একই অবস্থা। তিনি বলেন, র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা হচ্ছে। এ নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে নতুন করে আন্দোলন হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা এখনও অপেক্ষায় আছি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসবে। আমরা জনগণের জন্য নির্বাচন করছি, জনগণের জন্য নির্বাচনের মাঠে থাকবো। তারা যে ভোট দিতে চায় তার দরকার উপযুক্ত পরিবেশ।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, ট্র্যাজেডির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে নিহতের পরিবার এবং হাত-পা হারানো পঙ্গু হওয়া হাজারো খেটে খাওয়া মানুষকে। তাবিথ আউয়াল সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, সরকারের তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের অর্থ সঠিকভাবে বণ্টন না করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আন্তরিকতা নিয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা কড়া সমালোচনা করেছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শোক ও সমবেদনা: রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিকম্পের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এক বিবৃতিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায় থেকে দ্রুত আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তাবিথ আউয়াল আরও বলেন, আমি ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) সঙ্গে নিয়ে এমন পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে চেষ্টা চালাবো, যাতে ভূমিকম্পসহ যে কোন আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।

No comments

Powered by Blogger.