ভোটের আগে হামলা ধরপাকড়

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর পরিবেশ। গতকালই পৃথক ৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিএনপির এক ওয়ার্ড নেতা। এছাড়াও আহত হয়েছেন কৃষক লীগের সাবেক এক নেতাসহ প্রায় ৩৫ জন। এসব হামলার ঘটনায় সরকারি দলের কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে নির্বাচনের আগমুহূর্তে রাজধানীতে ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠেছে বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল খিলগাঁও এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা আরজু (৪০) আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরজুর অভিযোগ, নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগের প্রস্তুতিকালে যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে গুলি করেছে। সূত্র জানায়, গতকাল বিকাল ৪টায় খিলগাঁও থানাধীন উত্তর গোড়ানের টেম্পো স্ট্যান্ডের সামনে দুই নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হাবিবা চৌধুরী বীথির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই ওয়ার্ডের বিএনপির নির্বাচনী কমিটির পরিচালক ছিলেন আরজু। গণসংযোগের প্রস্তুতিকালে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে আরজুর বাম পায়ে এক রাউন্ড গুলি বিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান দলের নেতাকর্মীরা। আরজু সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুলের লোকজন তাকে গুলি করেছে। তার আগে নির্বাচনী তৎপরতা শুরুর পর থেকেই স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলো তাকে। খিলগাঁও থানার এসআই ইফতেখার হোসেন জানান, গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। গুলিবর্ষণকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। উত্তর গোড়ানের ৩৯৮/বি নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন নাজমুল হুদা আরজু।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন। হামলায় কাউন্সিলর প্রার্থী সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরীসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল ৩টায় সেগুনবাগিচা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ওই এলাকায় তখন গণসংযোগ করছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী। গণসংযোগ চলাকালে ১৫-২০ জন দুর্বৃত্ত তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সারোয়ার চৌধুরীর ভাই ইকবাল চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন রতনের লোকজন এই হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক আল রাজুর নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। হামলায় সারোয়ার চৌধুরীসহ প্রায় ২০ আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সারোয়ার চৌধুরীকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার চৌধুরী। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন রতন ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। শুরু থেকেই নানাভাবে সারোয়ার চৌধুরীকে বাধা দিচ্ছিলেন তারা। এ বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন রতন বলেন, আল রাজুর ওপর হামলা করেছে সারোয়ারের লোকজন। অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে সেগুনবাগিচায় রাজুর ওপর হামলা চালানো হয়। নিজে হামলা করে এখন নাটক করছেন সারোয়ার।
এছাড়া, শান্তিনগর মোড়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগমের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আঞ্জুমান আরার নির্বাচন পরিচালক আমিনুর রহমান অভিযোগ করেন, শান্তিনগর এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী আঞ্জুমান আরার পক্ষে গণসংযোগের সময় ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে ওই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.