বার্সার লাতিনত্রয়ীর সেঞ্চুরি

বিশ্বের সেরা ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে বিতর্কের আর কোনো সুযোগ রাখলেন না মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার। সমর্থকরা যাদের ভালোবেসে ডাকেন ‘এমএসএন’। বার্সেলোনার আক্রমণভাগের লাতিন ত্রিফলা এক সঙ্গে জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষের কী দুর্দশা হয়, তা আরও একবার দেখল ফুটবলবিশ্ব। এমএসএন ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল গেটাফে। মঙ্গলবার ন্যুক্যাম্পে গেটাফেকে ৬-০ গোলে চূর্ণ করে স্প্যানিশ লীগের শিরোপা দৌড়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে বার্সেলোনা। আর গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ইতিহাসে ঢুকে গেছেন মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারত্রয়ী। এ মৌসুমে তিনজন মিলে করেছেন মোট ১০২ গোল। এক মৌসুমে বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড লাইনের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এটি। ছয় গোল খেয়েও নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারে গেটাফে। কারণ, ৪৭ মিনিটেই স্কোরলাইন ৬-০ হয়ে গিয়েছিল! পাগুলে প্রথমার্ধে গোলে নেয়া সাত শটের পাঁচটিতেই লক্ষ্যভেদ করে বার্সেলোনা।
মেসি ও সুয়ারেজের জোড়া গোলের পাশাপাশি একটি করে গোল নেইমার ও জাভির। প্রথম ২৮ মিনিটেই স্কোরলাইনে নাম তুলে নিজেদের গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন- মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার। আরেকটি কীর্তি গড়েছেন এমএসএনত্রয়ী। এই প্রথম একই ম্যাচে তিনজন মিলে গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। এ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের বিবিসি (ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, গ্যারেথ ও করিম বেনজেমা) ত্রয়ী যেখানে ৮৯ গোল করেছেন সেখানে বার্সার এমএসএনত্রয়ীর গোল ১০২টি। ব্যক্তিগত দ্বৈরথেও রোনাল্ডোকে প্রায় ধরে ফেলেছেন মেসি। লা লীগায় রোনাল্ডোর গোল ৩৯টি, মেসির ৩৮টি। সবমিলিয়েও রোনাল্ডোর (৫০) এক গোল পেছনে রয়েছেন মেসি। ৪৯ ম্যাচে করেছে ৪৯ গোল। ৪৩ ম্যাচে নেইমারের গোল ৩২টি আর ৩৭ ম্যাচে সুয়ারেজ করেছে ২১ গোল। নিজেদের এখন বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে আগ্রাসীত্রয়ী বলে দাবি করতে পারেন তারা। এক মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার আগের রেকর্ডটি ছিল মেসি-সানচেজ-পেড্রোত্রয়ী। ২০১১-১২ মৌসুমে এই তিনজন মিলে করেছিলেন ১০১ গোল। এছাড়া ২০০৮-০৯ মৌসুমে ১০০ গোল করেছিলেন মেসি-ইতো-অঁরিত্রয়ী। ক্লাব রেকর্ড ভাঙার পর এবার ইউরোপিয়ান রেকর্ডের হাতছানি এমএসএনত্রয়ীর সামনে। ২০১১-১২ মৌসুমে ১১৮ গোল করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের রোনাল্ডো-বেনজেমা-হিগুয়াইনত্রয়ী।
সেই রেকর্ড ভাঙার জন্য অন্তত আরও সাতটি ম্যাচ পাবেন মেসিরা। আগামী সপ্তাহে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনাল। তারপরও আক্রমণভাগের ত্রিরতœকে বিশ্রাম দেয়ার ঝুঁকি নেননি বার্সা বস লুইস এনরিকে। কারণ মৌসুমের এই পর্যায়ে একবার পা হড়কালেই সর্বনাশ। আপাতত ৩৪ ম্যাচে ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে বার্সা। ৩৩ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ৭৯। পরের ম্যাচে রিয়াল জিতলে ব্যবধান ফের দুই পয়েন্টে নেমে আসবে। ফলে শীর্ষে থাকলেও শিরোপা নিশ্চিত করতে বাকি চার ম্যাচের চারটিতেই জিততে হবে বার্সাকে। তবে লাতিনত্রয়ী যে ফর্মে আছেন তাতে বার্সার জন্য এটা বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা নয়। এনরিকে তো বলেই দিয়েছেন, ‘এমন ছন্দে থাকলে ওদেরকে থামানো অসম্ভব। এক ম্যাচে এতগুলো দৃষ্টিনন্দন গোল আগে কখনও দেখিনি আমি।’ সতীর্থ জেরার্ড পিকের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, ‘সুয়ারেজ, নেইমার ও মেসির মধ্যে যে বোঝাপড়া এমন কিছু আগে কখনও দেখিনি আমি। ওদের রসায়ন সত্যিই দুর্দান্ত।’পরশু নয় মিনিটে ‘পানেনকা’ পেনাল্টিতে গোল উৎসবের সূচনা করা মেসিই ৪৭ মিনিটে আরেকটি চোখ ধাঁধানো গোলে গেটাফের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন। সুয়ারেজ দু’গোল করেন ২৫ ও ৪০ মিনিটে। এই দুই গোলের মাঝে আরও দু’বার গেটাফের জাল কাঁপান নেইমার ও জাভি। শেষ দিকে হ্যাটট্রিকের সহজ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। এ নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ থাকার কথা নয় বার্সা ভক্তদের। ওয়েবসাইট।
এমএসএনত্রয়ীর ‘সেঞ্চুরি’
ম্যাচ গোল
মেসি ৪৯ ৪৯
নেইমার ৪৩ ৩২
সুয়ারেজ ৩৭ ২১

No comments

Powered by Blogger.