এত ভোট দেখে আশ্চর্য হয়েছি -প্রথম আলোকে মনজুর আলম by রাহীদ এজাজ ও একরামুল হক

ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সোয়া তিন ঘণ্টা পরই সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন চট্টগ্রামে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম। শুধু ভোট নয়, রাজনীতিকেও বিদায় জানান চট্টগ্রামের সদ্য বিদায়ী এই মেয়র। কিন্তু গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে দেখা যায় তিনি পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। ভোটের এই ফলে মনজুর আলম নিজেও অবাক।
নির্বাচনের দিন অনেকটা আকস্মিকভাবে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও এই সিদ্ধান্তটা হুট করে নেওয়া নয় বলেও প্রথম আলোকে জানান মনজুর আলম। সাবেক এই মেয়রের ভাষায়, তাঁর বয়স বেড়েছে, তাই রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াকেই তাঁর কাছে ভালো মনে হয়েছে। অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও তাঁকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। তাই মেয়র নির্বাচিত হলেও রাজনীতি ছাড়তেনই—এটা জোর দিয়ে বলেছেন তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরের সিটি গেট এলাকার বাসায় প্রথম আলোর সঙ্গে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে একান্তে কথা বলেন মনজুর আলম। ৩০ মিনিটের আলাপচারিতায় বেশ কিছু প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেও কয়েকটি প্রশ্ন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর মনজুর আলম এতটাই বিমর্ষ ছিলেন যে ওই দিন আপনজন ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলেননি। কাল দুপুরে তাঁর বাসায় গিয়ে অবশ্য আগের দিনের মনজুরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাসায় দিনভর নেতা-কর্মীর সঙ্গে বেশ খোশমেজাজেই আলাপ করেছেন।
সকাল আটটায় ভোট শুরু হওয়ার পর সোয়া ১১টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও তিন লাখ ভোট পেলেন। নির্বাচন থেকে না সরলে জিততেন িক না, এ প্রশ্নের জবাবে মনজুর আলম দাবি করেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর প্রতি মানুষের সাড়া দেখে জয় সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু ভোট শুরু হতে না-হতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে তাঁর পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেওয়া, কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, এজেন্ট নিয়ে আপত্তি, হামলা ও কেন্দ্র দখলের খবর পাচ্ছিলেন।
মনজুর আলম বলেন, ‘চারদিক থেকে একের পর এক বিশৃঙ্খলার খবর শুনে ভেঙে পড়ি। আমি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমার জন্য লোকজন বিপদে পড়ুক এটা চাইনি। যেখানে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই সেখানে জেতার সুযোগ কোথায়! তবে আজ যখন এত ভোট দেখছি, এতে আশ্চর্য হয়েছি। অবাক হয়েছি এত মানুষের সমর্থন দেখে।’
মনজুর আলম জানান, ৭১৯টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৪০০ পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে প্রতিটি কেন্দ্র ও বুথ পরিদর্শনের মতো অবস্থা তাঁর দলের ছিল না। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে ভোটের ফল দেখে নেতা-কর্মীরাই শুধু নন, অনেক সাধারণ ভোটারও আফসোস করেছেন বলে তিনি জানান।
মনজুর আলম বলেন, ‘অনেকে আমার সিদ্ধান্তটাকে ভুল হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রয়োজনে তাঁরা আরও কিছু সময় অপেক্ষার কথা বলেন। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন—তিন ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা সে হিসেবে দুই পক্ষের ভোটের ব্যবধানে বলা যায়, ভোটে থাকলে আমি অবশ্যই ইনশা আল্লাহ জিততে পারতাম।’
মানুষের কথায় এখন কী মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে মনজুর আলম বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ দেখে আমি ভোটে থাকতে চাইনি। আমার কারণে একজন কর্মী, সাধারণ একজন মানুষ কেন কষ্ট করবে?’
সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা নিজের নাকি দল থেকে চাপিয়ে দেওয়া, এ প্রশ্নের উত্তরে মনজুর আলম বলেন, ‘ওপর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। আমার দেওয়ানহাটের দপ্তরে বসে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে প্রথম এ নিয়ে কথা বলি। পরে নগর বিএনপি সভাপতি আমীর খসরুর সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়। পরে সবাই মিলে একমত হয়ে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করি।’
নির্বাচন থেকে সরলেও রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া কি আবেগ, হতাশা না কি অন্য কোনো কারণ রয়েছে—উত্তরে মনজুর আলম জানান, আবেগ নয়, এর সঙ্গে বয়সও তাঁর বিবেচনায় ছিল। তিনি জানান, সমাজসেবা থেকেই রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁর বাবাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সাবেক এই মেয়রের বয়সের ৬৩ বছর। এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মনজুর আলমকে প্রশ্ন করা হয়, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাইছি না। তবে দেশের জন্য রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতি ছাড়া দেশ চলতে পারে না। রাজনীতির কারণেই দেশ পেয়েছি। দেশ যত দিন থাকবে রাজনীতি তত দিন থাকবে। তবে সুস্থ রাজনীতির প্রয়োজন। আদর্শিক ও সুস্থ রাজনীতির একটু অভাব আছে। সবাই সুস্থ রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’
রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে কর্মীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন কি না, এমন প্রশ্নে মনজুর আলম জানান, দলের সঙ্গে তিনি থাকলেও সক্রিয়ভাবে বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না। তাঁর সরে যাওয়াটা কাউকে বিপদে ফেলবে বলেও তিনি মনে করেন না।

No comments

Powered by Blogger.