নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার সুযোগ থাকল না -বিশিষ্টজনদের অভিমত by ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া ও গোলাম রব্বানী

দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতিসহ ব্যাপক জালিয়াতি ও ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রমাণ করেছে, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ থাকল না। এখন নির্বাচন কমিশন নিজেই একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনের যুগে প্রবেশ করল এবং অদূর ভবিষ্যতে যত নির্বাচন হবে সবই এ ধরনের ‘ম্যানেজড’ নির্বাচন হবে। মানুষ এই ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি কঠিন হয়ে উঠল। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল দেশে আর গণতন্ত্র থাকল না। সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের যে ক্ষীণ আশা দেখা দিয়েছিল, তা দূরীভূত হয়ে গেছে। গণরায়ের সুযোগ থাকলে রাজনীতিবিদেরাও বুঝতে পারতেন আসলে দেশের মানুষ কী চিন্তা করছে। সেই গণরায়ের সুযোগ না হওয়ায় এখন রাজনৈতিক সঙ্কট আরো সঙ্ঘাত-সহিংসতা ও অনিয়মতান্ত্রিকতার দিকেই ধাবিত হবে। দেশে উগ্রবাদী ও অনিয়মতান্ত্রিক শক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে অথবা বাংলাদেশে ল্যাটিন আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো অত্যন্ত কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিস্ট শক্তি কায়েম হতে পারে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দণি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর গতকাল বুধবার নির্বাচনের ব্যাপারে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংবিধান ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্টজনেরা এ ধরনের মতামত ব্যক্ত করেন।
এম হাফিজ উদ্দিন খান : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি টিআইবির ট্রাস্টি সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলতে মানুষ যেটি মনে করতেন, সেটি হচ্ছে ইলেকশন। কিন্তু সেই ইলেকশন তো আর হলো না। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল দেশে আর গণতন্ত্র থাকল না। ২০১৪ সাল থেকে দেশে আর ইলেকশন নেই। তিনি বলেন, জাতীয় জীবন ও রাজনীতিতে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। তবে কিভাবে কতটুকু পড়বে, সেটি ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটি নাটক খেলেছে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য। যেহেতু বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, তাই আওয়ামী লীগ আশা করেছিল দলটি হয়তো নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়ে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০ দল আশা করেছিল এ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দেশে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে। ফলে আগামীতে হয়তো সরকার ও বিরোধী দল একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য সমঝোতায় আসতে পারবে। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় যে, সরকার নির্বাচনটাকে একই পদ্ধতিতে তাদের সন্ত্রাসী দিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। এটি দেশবাসী দেখেছেন, বিশ্ববাসী দেখেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী আরো বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে এ দেশে ভবিষ্যতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এ সমস্যা সমাধান করতে হলে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য এ মুহূর্তে সর্বদলীয়ভাবে একটি সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। এটি যদি অতিসত্বর না হয়, ভোট দিতে না পারায় বাংলাদেশের মানুষের মনে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে দেশে যেকোনো সময় একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারো জন্য শুভ হবে না।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ তাদের ক্ষোভ, অভিযোগ, অসন্তোষ প্রভৃতি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ করার একটি সুযোগ পায়। কিন্তু সিটি নির্বাচনে মানুষ সেই সুযোগ পেল না। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মানুষ তার ক্ষোভ-অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার সুযোগ না পেলে ভবিষ্যতে তা অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ পেতে পারে। তার কোনো অনিয়মতান্ত্রিক পরিণতি হতে পারে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের যে ক্ষীণ আশা দেখা দিয়েছিল, তা দূরীভূত হয়ে গেছে। গণরায়ের সুযোগ থাকলে রাজনীতিবিদেরাও বুঝতে পারতেন আসলে দেশের মানুষ কী চিন্তা করছে। সেই গণরায়ের সুযোগ না হওয়ায় এখন রাজনৈতিক সঙ্কট আরো সঙ্ঘাত, সহিংসতা ও অনিয়মতান্ত্রিকতার দিকেই ধাবিত হবে।
এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রে যেসব বাধা ছিল সেগুলো তারা দূর করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের চরম আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।
ড. তোফায়েল : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে আর কী বলব। কী হয়েছে তা তো সবার কাছেই পরিষ্কার। দেশে আর কোন ব্যবস্থাই আছে যে তার ওপর এর প্রভাব পড়বে। দেশে আর কী ব্যবস্থা আছে? সব ব্যবস্থায়ই তো বলা যায় শেষ হয়ে গেল। জাতীয় ও রাজনৈতিক জীবনে যে সঙ্কট ছিল তা থেকেই গেল। তার কোনো সমাধান আর হলো না। সঙ্কট যে আরো ঘনীভূত হবে তাতো আর বলার প্রয়োজন পড়ে না।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজনৈতিক কৌশলের কাছে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চাপা পড়ে গেল। নির্বাচন কমিশনের ওপর এখন আর মানুষের কোনো আস্থা নেই। কমিশন এই নির্বাচনে যে ভূমিকা রেখেছে তার ওপর আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ থাকল না।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যা ঘটেছে, যা পড়েছি, দেখেছি, উপলব্দি করেছি তাতে এটা পরিষ্কার যে, নির্বাচন নিয়ে যা ঘটেছে তা মোটেও ভালো হয়নি। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে কথা এসেছিল, এই নির্বাচনের পর তা নিয়ে একটা কিছু হবে মনে করা হয়েছিল। যদিও তা হতো কি না পরিষ্কার ছিল না। এখন নির্বাচনে কী হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলসহ সবাই দেখেছে। এর প্রভাব জাতীয় জীবনে, রাজনীতিতে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় পড়বে। এই থেকে পরিষ্কার নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজনীতি ভঙ্গুর অবস্থানে চলে গেছে। এর পরিণাম মোটেও শুভ হবে না। এই নির্বাচন থেকে সরকার লাভবান হয়েছে বলে মনে হয় না। কেউই লাভবান হয়েছে বলে মনে হয় না। সবারই ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিটি নির্বাচন যেভাবে বর্জন করতে দেখলাম এমন বর্জন আগে দেখিনি, বর্জনটা এতো সকালে কেন তাও বোধগম্য নয়।
ড. দিলারা চৌধুরী : বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, ক্ষমতাসীনেরা দেশে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। কর্তৃত্ববাদীরা নির্বাচন বা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতাই করে, কিন্তু তা ম্যানিপুলেট করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। আমাদের সংসদের কথাই বলা যায়, এর কোনো ভূমিকা তো নেই। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। তিনি আরো বলেন, অনেকে বলার চেষ্টা করেনÑ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। আমি মনে করিÑ বেগম জিয়া কোনো ভুল করেননি। সে নির্বাচনেও একই ফলাফল হতো। তিনি আরো বলেন, দেশের জন্য আশঙ্কা হচ্ছে যে, এখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।
ড. শাহদীন মালিক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমরা একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছি। আমরা এক ধরনের ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনের যুগে প্রবেশ করেছি। সেই ধরনের একটি নির্বাচনই হয়ে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে যত নির্বাচন হবে এ ধরনের ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনই হবে। এখন জাতি এই ‘ম্যানেজড’ নির্বাচনেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। বিশেষ করে যারা ২০১০ সালের পর নতুন ভোটার হয়েছে তাদের কাছে এ ধরনের নির্বাচন তো স্বাভাবিক মনে হবে। কারণ তারা তো এর আগের ভালো নির্বাচন দেখেনি। তিনি বলেন, এটা দেশের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো নয়।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করছে এটাকে ভুল প্রমাণ করার মতো যুক্তি, প্রমাণ এবং সামর্থ্য এই মুহূর্তে বিএনপির আছে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে সরকারের দমননীতির কারণে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারণে এই নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ভুল প্রমাণ করা কঠিন হবে।
ড. আসিফ নজরুল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রকাশ্যে কারচুপি ও কেন্দ্র দখল হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেভাবে কাজ করেছে তার ফলে এই নির্বাচনের আর কোনো গ্রহণযোগ্যতাই নেই। সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলোÑ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার যে নির্বাচনীব্যবস্থা দেশে কায়েম করল তা হাস্যকর। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পদ্ধতিতে নিজেদের প্রতিনিধি নির্ধারণে জনগণের যে অধিকার, তা অন্যতম সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। এই অধিকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মৌলভিত্তি। এই অধিকারের প্রতি সরকার যে নিষ্ঠুর অবজ্ঞা দেখিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের আশাবাদ নিশ্চিহ্ন করেছে সরকার।
ড. আসিফ আরো বলেন, অনেকে বলতে চাচ্ছেন- বিএনপির এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল না। কিন্তু দেখা গেছে, এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে এই দেশে বিরোধী দলের হয়ে রাজনীতি করাটা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ যে ক্রমান্বয়ে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত হয়েছেÑ এই নির্বাচন তারই প্রতিফলন। এত অনিয়ম, কারচুপি, প্রচারণায় বাধা এবং বর্জনের পরও বিএনপি যে ভোট পেয়েছে, তাতেই প্রমাণ হয়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি সব সিটিতেই জয়ী হতো। তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি কঠিন হয়ে উঠল। আমার আশঙ্কা হচ্ছেÑ এর ফলে দেশে উগ্রবাদী ও অনিয়মতান্ত্রিক শক্তির উদ্ভব ঘটতে পারে। অথবা বাংলাদেশে ল্যাটিন আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো অত্যন্ত কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিস্ট শক্তি কায়েম হবে।
অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান : সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেন, ঢাকা উত্তর ও দণি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুষ্ঠু, নিরপে, অর্থবহ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার প্রকৃত পরিবেশ তৈরির সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা অনিয়ম, ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট, পোলিং এজেন্টদের প্রবেশে বাধা প্রদান, মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, সংবাদকর্মীদের বাধা প্রদান, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা, শো-ডাউন করে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও পপাতমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগ আমলে না নেয়া এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা না করায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর দেশের জনগণ ও সব রাজনৈতিক দল আস্থা হারিয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের সুযোগ থাকলেও তাদের সহযোগিতা না নেয়ায় তাদের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা আরো পাকাপোক্ত হলো। তিনি আরো বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি শুধু পপাতদুষ্ট, ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনই নয়; এই নির্বাচনে এটাও প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার আর সুরতি নয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের যে সমাধান জনগণের প্রত্যাশিত ছিল, তা সম্পূর্ণরূপে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে এবং চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.