পুলিশ-গোয়েন্দা বেষ্টনীর মধ্যেও ঘটছে ভয়ানক অপরাধ by আবু সালেহ আকন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া বেষ্টনীর মধ্যেও ঘটছে গুরুতর অপরাধের ঘটনা। এমনকি, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েও দুর্বৃত্তরা নির্বিঘেœ পালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তরা ককটেল ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। ঘটছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও। পুলিশ-র‌্যাব ও কড়া গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে কিভাবে দুর্বৃত্তরা ভয়ানক অপরাধ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। আবার ঘটনার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও দুর্বৃত্তরা শনাক্ত হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। যার প্রতিটি প্রবেশদ্বারেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। এমনকি কোনো কোনো পথে পুলিশের একাধিক টিমের অবস্থান। এর মধ্যেই একের পর এক ঘটে যাচ্ছে নানা ভয়ানক অপরাধ। সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়। এ ঘটনায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন অভিজিৎ-এর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। হাসপাতাল সূত্র জানায়, অভিজিৎ-এর মাথায়ই ছিল ধারালো অস্ত্রের গুরুতর চারটি ক্ষত। আর তার স্ত্রীর মাথায় তিনটি ও হাতে একটি গুরুতর ক্ষত। সূত্র জানায়, যে স্থানটিতে এ ঘটনা ঘটে তার আশপাশে বেশ কয়েকটি পুলিশের টিম দায়িত্বরত ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল শতশত মানুষ। এর মধ্যেই দুর্বৃত্তরা এ ভয়ানক ঘটনা ঘটায়। আশপাশের এ নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দিকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া বেষ্টনী রয়েছে। শাহবাগে রয়েছে থানা কার্যালয়, নীলক্ষেতের ওই দিকে একটি পুলিশ ফাঁড়ি আর নিউ মার্কেট থানার অবস্থান, হাইকোর্টের দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে দিনরাত পুলিশ পাহারা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওখানেও রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। শহীদ মিনারের সামনে, দোয়েল চত্বরে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা তো আছেই। এর বাইরেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির বইমেলাকে ঘিরে এখানে বিপুল পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। সূত্র জানায়, ভেতরে অভিজিৎকে হত্যা করে কিভাবে দুর্বৃত্তরা নির্বিঘেœ পালিয়ে গেল তা নিয়ে এখন সর্বমহলে প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ এলাকায় পুলিশ-গোয়েন্দাদের কড়া বেষ্টনীর মধ্যেও প্রায়ই ঘটছে ককটেল ও বোমা হামলার মতো ঘটনা। কিন্তু ধরা পড়ছে না কেউ। মাঝে মধ্যে দু-একজনকে আশপাশ থেকে গ্রেফতার করা হলেও তারা সন্দেহভাজন। মূল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শারমিন আক্তার নামে দুই বছরের এক শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই উদ্দ্যানকে ঘিরে দুর্বৃত্তদের একটি শক্ত আস্তানা গড়ে উঠেছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যেই মাদক ব্যবসায়সহ নানা অপকর্ম চলে আসছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মতিঝিল থানা পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরতে গেলে রাজধানীর এজিবি কলোনি এলাকায় সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে চারজন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে চার সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার কাইচাবাড়ি এলাকায় বাপ্পী নামে এক জুট ব্যবসায়ীর দুই হাত কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিনে-দুপুরে রাজধানীর গোলাপবাগের এক বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা মা ও মেয়েকে কুপিয়ে ঘরের মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৯) নিহত হন, মা ফৌজিয়া আক্তার (৪৫) গুরুতর আহত হন।
রাজধানীর বাইরেও ঘটছে নানা অপরাধের ঘটনা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে বাবুল মেম্বর (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন বগুড়ার ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুল হককে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে আক্রান্ত হন রিয়াজ রহমান। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে তার ব্যবহৃত গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। এভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারার মধ্যেও ঘটছে অপরাধের ঘটনা। সূত্র জানায়, সম্প্রতি হরতাল ও অবরোধ নিয়ে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় থমকে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় কিছু যানবাহন চললেও তাতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এমনকি পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেও যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। চলমান আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশেই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নিরাপত্তার মধ্যেও বিভিন্ন ব্যক্তির বাসা-বাড়ি ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।
এ দিকে এসব ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, এগুলো চোরাগোপ্তাভাবে ঘটছে।

No comments

Powered by Blogger.