হতাশ হওয়া চলবে না by আবদুর রাজ্জাক

বাংলাদেশের শুরুটা হতে পারত স্বপ্নের মতো। কিন্তু তা হয় নি। হয়নি একটি সহজ
ক্যাচ ফেলে দেওয়ার কারণেই। দায়ী ব্যক্তি এনামুল হক। এ​মনিতে খুব ভালো ফিল্ডার হিসেবে
পরিচিত এনামুল লাহিরু থিরিমান্নের ক্যাচটি যেভাবে ফেলে দিলেন তার মূল কত বেশি হয়
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ শিবিরে ভাবনা হতে পারে এটিই।  মাশরাফির প্রথম ওভারটি ছিল দুর্দান্ত।
লাহিরু থিরিমান্নে তাঁর বিপক্ষে বেগ পাচ্ছিলেন যথেষ্টই। তৃতীয় বলটিতেই তিনি পরাভূত
হয়েছিলেন সরাসরিই। অ্যাঙ্গেল করে বেরিয়ে যাওয়া চতুর্থ বলটিতে ব্যাট পেতে দিলেন
থিরিমান্নে। কানায় লেগে তা সোজা চলে গেল স্লিপে। বল ছিল পুরোপুরি এনামুলের
নাগালের মধ্যেই। তালুবন্দী করাটাই কেবল বাকি। কিন্তু এনামুল কী করলেন!
সহজ ক্যাচটি চারবারের প্রচেষ্টাতেও হাতের মুঠোয় নিতে পারলেন না তিনি। দুর্ভাগ্য আর
কাকে বলে! এনামুলের মিসটি যে কতটা মূল্যদায়ী ছিল, তার প্রমাণ রেখেছে লঙ্কান
ওপেনাররা। প্রথম ওভারেই যেখানে সাজঘরে ফেরার কথা ছিল ​থিরিমান্নের, সেখানে
থিরিমান্নে ফিরলেন নিজের ফিফটি পূরণ করেই, দলীয় ১২২ রানের মাথায়। রুবেল
হোসেনের বলে থার্ডম্যানে তাসকিন আহমেদের চমৎ​কার এক ক্যাচেই শেষ হয়েছে
এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ইনিংস। স্টারস্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে
এনামুল হকের ফেলে দেওয়া ক্যাচটি নিয়ে একটি চমৎ​কার মন্তব্য করেছেন। রিপ্লে
দেখানোর সময় হার্শা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এনামুল ক্যাচটি ধরার চেয়ে
ক্যাচ ধরে সে কীভাবে উদযাপন করবে, সেটা ভাবতেই ব্যস্ত ছিল।’
হার্শার এই অনুমান সত্যি হলে সেটা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
হতাশায় ডুবিয়ে ফিরলেন তামিম। ছবি: শামসুল হক,প্রথম আলো, অস্ট্রেলিয়া থেকে
ক্রিকেটে একটা কথাই আছে যে, যত দ্রুত সম্ভব প্রতিপক্ষের শুরুর উইকেট ফেলে দাও। না ফেলতে পারলে ওই ব্যাটসম্যানরাই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এটা সত্য যে, বাংলাদেশ গতকালকের ম্যাচে সে সুযোগটা প্রথম ওভারেই পেয়ে গিয়েছিল। মাশরাফির দারুণ বলে স্লিপে সহজ ক্যাচটা বিজয় ফেলে না দিলে শ্রীলংকা হয়তো চাপে পড়ে যেত। শুরুতেই উইকেট পড়লে যে কোনো দলই চাপে পড়ে যায়। আর এটা বিশ্বকাপ। ফলে চাপটা আরও বেশিই তৈরি হওয়ার কথা।  এরকম আরও বেশ কয়েকটি জীবন আমাদের কাছ থেকে পেয়েছেন শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানরা। কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারত্নে দিলশান অনেক বড় ব্যাটসম্যান। তাদের সুযোগ দিলে তারা সেটার সদ্ব্যবহার করবেন। এই ম্যাচেও সেটা প্রতিফলিত হয়েছে। আরেকটা পুরনো কথা তো আছেই যে, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। আমার মনে হয়, ক্যাচগুলো নিতে পারলে শ্রীলংকাকে অন্তত তিনশ' রানের নিচে আটকে রাখা যেত। ৩০০ আর ৩৩২ রানের পার্থক্যটা অনেক কম মনে হতে পারে, ১৯৫ আর ২০৫ রানের পার্থক্যটাও অনেক কম মনে হতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটে ১ রানই যেখানে অনেক পার্থক্য তৈরি করে দেয়, সেখানে এত রানের ব্যবধান স্বাভাবিকভাবেই মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও আগে ফিল্ডিং করে ক্যাচ মিস করলে পরে ব্যাটিং করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সেটার প্রভাব পড়ে। দুই রকম প্রভাবই পড়তে পারে। কেউ ক্যাচ মিসের ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে ব্যাটিংয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ফলে, এটা ব্যক্তিবিশেষ ও ম্যাচের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এই বিশ্বকাপে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই তিনশ'র বেশি রান হচ্ছে। হয়তো উইকেটগুলোই এমন। তার পরও আমার মনে হয়, এই ম্যাচে বাংলাদেশ রান একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছে। পঞ্চম বোলারের কোটা পূরণ করতেও অনেক সমস্যা হয়েছে। মনে হয়, একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলালেই ভালো হতো। তার পরও পরে ব্যাটিং করলে বড় রান তাড়া করার প্রস্তুতিও আমাদের নিতেই হবে। প্রতিদিন তো আর প্রথমে ব্যাটিং করা সম্ভব না। শুরু থেকেই উইকেট হারিয়ে ফেলার ফলে বাংলাদেশেরও রানটা তাড়া করতে গিয়ে সমস্যা পড়তে হয়েছে। উইকেট পড়লেও অবশ্য বাংলাদেশের রানরেটটা কিন্তু ঠিকই ছিল। আমার মনে হয়, এটা খুবই ইতিবাচক একটা ব্যাপার। এরকম অনেকগুলো ইতিবাচক ঘটনা এই ম্যাচ থেকে ঘটেছে। যেগুলো থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেওয়ার আছে। অনেকেই বলতে পারেন, উইকেটগুলো পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উচিত ছিল রানরেটটা ভালো রাখার জন্য ব্যবধান কমানোর জন্য খেলা। আমি তাদের সঙ্গে একমত না। আমার মনে হয়, রান যতই হোক আর উইকেট যতগুলোই পড়ূক না কেন, জয়ের চেষ্টা করাই সবচেয়ে ইতিবাচকতা। আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, ৩৩২ রান তাড়া করতে গিয়ে উইকেট পড়লেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জয়ের জন্যই খেলেছে। এটা খুবই ইতিবাচক ঘটনা।
আমার মনে হয়, ৯২ রানে হারলেও, হতাশার কিছু নেই। মাথায় রাখতে হবে যে, শ্রীলংকা অনেক ভালো দল। তাছাড়া আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ড বাদে অপর একটি শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে কিন্তু আমরা কখনও বলিনি যে, শ্রীলংকাই আমাদের মূল লক্ষ্য। হয়তো বলা হয়েছে, শ্রীলংকা অন্যতম লক্ষ্য এবং তাদের হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। যে কোনো দলকে হারানোর সামর্থ্যই বাংলাদেশের আছে। তবে সেটা অনেক পরের বিষয়। আপাতত পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ডকে নিয়েই চিন্তা করা উচিত। স্কটল্যান্ড ছাড়া অন্য কাউকে মাথায় ঢুকাতে গিয়ে ওল্টাপাল্টা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর নিউজিল্যান্ড ফর্মে আছে এবং নিজেদের মাটিতে খেলবে বলে ওদের হারানো কঠিন হবে বলেই আমার মনে হয়। যদিও বলছি না যে, ওরা অপ্রতিরোধ্য। তবে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য এখন ইংল্যান্ডই হওয়া উচিত। সে চিন্তা অবশ্য স্কটল্যান্ডকে হারানোর পরই করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.