ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে -১৮ জাহাজে এসেছে পৌনে সাত লাখ টন by মাসুদ মিলাদ

বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। পড়তি দামের এসব পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দর দিয়ে এখন একসঙ্গে ১৮টি বড় জাহাজে এসেছে প্রায় ছয় লাখ ৭৮ হাজার টন ভোগ্যপণ্য।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো পণ্য আমদানি করেছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম ও টিকে গ্রুপ এসব পণ্যের আমদানিকারক। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম মনে করেন, ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়লে বাজারে সরবরাহ বাড়বে। ফলে দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে না। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কম থাকায় আমদানিতেও খরচ আগের তুলনায় কম পড়বে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বড় জাহাজে থাকা ভোগ্যপণ্য খালাস করে কারখানায় নিতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগছে। ৩০ থেকে ৫০ হাজার টন ভোগ্যপণ্য বহনকারী এসব বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই এগুলো সাগরে নোঙর করে রাখা হয়। এরপর বড় জাহাজ থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে খালাস করে ছোট জাহাজে বোঝাই করা হয়। ছোট জাহাজে নদীপথে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি ঘাটগুলোতে নিয়ে খালাস করা হয়।
বন্দরে এখন সবচেয়ে বেশি পণ্যবাহী জাহাজ আছে অপরিশোধিত চিনির। ছয়টি জাহাজে ব্রাজিল থেকে আনা এই চিনির পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টন। বিশ্ববাজারে চিনির দর এখন কমতির দিকে। ২০১০ সালের জুনের পর চিনির দাম এখন সর্বনিম্ন বলে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বেসরকারি পরিশোধন কারখানা মালিকেরা কমতির দিকে থাকা এসব চিনি আমদানি করেছেন।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে চিনির চাহিদা ১৪-১৫ লাখ মেট্রিক টন। এ হিসাবে ছয় জাহাজের চিনি দিয়ে আড়াই মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। চাহিদার তুলনায় গত অর্থবছর দেশে চিনির সরবরাহ বেশি ছিল বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। পড়তি দামে কেনা পণ্য আমদানিও বেড়েছে। এর প্রভাবে সামনে স্থানীয় বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।
বিশ্ববাজারে গত মে মাসের পর থেকে কমেছে গমের দাম। দেশে গম আমদানি হয় মূলত কানাডা, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের গমের দাম তিন মাসের ব্যবধানে ২৮০ থেকে কমে ২৩৬ ডলারে নেমে এসেছে। কানাডার গমের দামও টনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ ডলার কমেছে।
বন্দরে এখন পাঁচ জাহাজে গম আমদানি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। এসব গম আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ। এ ছাড়া সরকারি আমদানির প্রায় ৩৩ হাজার টন গমও রয়েছে। এসব গম আমদানি হয়েছে রাশিয়া, কানাডা ও ইউক্রেন থেকে।
বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি কমেছে ভোজ্যতেলের দর। ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দর কমে বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি প্রায় ৭১৯ ডলার। পামতেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসার পর এখন সামান্য বেড়ে টনপ্রতি ৬৭৭ ডলারে উঠেছে। বন্দরে নিয়মিতই আসছে ভোজ্যতেল। এখন সাত জাহাজে আসা ৫৬ হাজার টন সয়াবিন ও পামতেল খালাস হচ্ছে।
এসব পণ্য ছাড়াও দুই জাহাজে আসছে ৮৩ হাজার টন মটর ডাল। বিশ্ববাজারে শুধু এই পণ্যটির দাম সামান্য বাড়তির দিকে।

No comments

Powered by Blogger.