গাজা এখন বধ্যভূমি -রাস্তায় ট্যাংক গলিতে লাশ ঘরে ইসরাইল

ইসরাইলের বর্বর বিমান হামলা আর স্থল আক্রমণে গাজা এখন বধ্যভূমি। ট্যাংক দখল করে রেখেছে রাস্তা। গলিতে গলিতে পড়ে আছে লাশ, ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা- সেখানেই ঘাঁটি গাড়ছে। প্রত্যক্ষদর্শী শিজাইয়া গ্রামের আহমেদ রাবিয়া জানান, ‘রাস্তায় পড়ে আছে মৃত-অর্ধমৃত দেহ। তাদের কেউ সাহায্য করতে পারছে না। হতভাগ্যদের লাশ পড়ে আছে রাস্তায় রাস্তায়, গলিতে গলিতে। নারী-পুরুষ, শিশু-যুবক-বৃদ্ধের গলিত-অর্ধগলিত লাশ। দাফন করারও সুযোগ নেই। এসব লাশের পাশে কাউকে ভিড়তে দিচ্ছে না নৃশংস ইসরাইলি সেনারা। মৃত্যদেহের ওপর চলছে বর্বরতা, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ছোড়া হচ্ছে বোমা। ফিলিস্তিনের জরুরি সেনাপ্রধান বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা বলেন, হাসপাতালে জায়গা নেই ‘গোলা নিক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বের হতেও পারছে না।’ গাজায় স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, আহত নাগরিকদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যেতে দিচ্ছে না ইসরাইলি সেনারা। অ্যাম্বুলেন্স স্টেশনের শিফট সুপারভাইজার জিহাদ সেলিম বলেন, ‘আমরা যা দেখছি, তা সহ্য করা খুব কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘একটা ঘরে গিয়ে দেখি একটা লাশ টুকরো টুকরো করা।’ ৮ জুলাই শুরু হওয়া ইসরাইলের গাজা আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়েছে। রোববার ছিল ভয়াবহ রক্তাক্ত দিন।

এদিকে, ফিলিস্তিন অধিকৃত গাজায় হামলার ১৩তম দিন রোববারে সবচেয়ে ভয়াবহতম হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ দিনই ইসরাইলের হামলায় ১০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। খবর বিবিসির।
পূর্ব গাজার শিয়াজিয়া এলাকায় এদিনের বর্বরতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এর আগে রোববার দুপুরে ইসরাইলি বাহিনী শিয়াজিয়ায় দুই ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করে এক ঘণ্টা পরেই হামলা চালায়। ওই অঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীকে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে সেখানে বিমান হামলা শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ইসরাইলের হামলা যুদ্ধাপরাধ : আরব লীগ
ফিলিস্তিনের গাজায় রোববার ইসরাইলি বাহিনীর চালানো ভয়াবহতম গণহত্যার পর দেশটির এ আচরণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আরব লীগ। খবর এএফপির।
কায়রোভিত্তিক আরব লীগের প্রধান নাবিল আল-আরাবি রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, উত্তর-পূর্ব গাজার শেজাইয়ায় ইসরাইলি গোলাবর্ষণ ও স্থল হামলায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। শেজাইয়া ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় রোববার ১০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর ওই এলাকার রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া সেখান থেকে হাজারো লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে তিন বছর আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটা আশা ছিল যে, আরব জাহানে ক্রমবিকাশমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে তারা হয়তো আরব দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে পারবে। মুনদার মুয়াম্মার নামে একজন তিউনিশীয় বিক্ষোভকারী যিনি তার দেশের রাজধানীতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিলে যোগ দেন তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আরব দেশই ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিচ্ছে না।
৩২ ইসরাইলি সেনা খতম করেছি : হামাস
ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেড বলেছে, শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩২ ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। খবর প্রেস টিভির।
অবশ্য, ইসরাইল দীর্ঘ লুকোচুরির পর রোববার ১৩ সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এ নিয়ে একজন মেজরসহ ১৮ সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করল ইসরাইল। হামাসের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেক ইসরাইল সেনা আহত হয়েছে এবং তাদের হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.