নাগরিক ঐক্যের মতবিনিময় নিজেদের ব্যর্থতাই সরকারের বড় শত্রু

বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাই তাদের বড় শত্রু। তাদের আর কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই। তারা জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার স্বাধীনতাকে অর্থহীন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে অর্থহীন করেছে। এই সরকারের কাছে কোন দাবি আদায়ের ভিত্তি নেই। বাংলাদেশে রাস্তায় আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়- এটা প্রমাণ হয়েছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ করেও এদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সম্মানে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, দেশের মানুষ যেখানে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে সেখানে গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার যে নজির স্থাপন করেছে তা পাকিস্তান আমলেও সম্ভব হয়নি। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে বলছে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। যারা শাসনতন্ত্র সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না তারা আজ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোটছাড়া ঘোষিত এমপিদের দাপটে এখন সবার দিশাহারা অবস্থা। তাদের অবৈধ কাজের বিরোধিতা করলেই হামলা-মামলা, গুম-খুনের শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিন্দিত ও জনবিচ্ছিন্ন, এটা অস্বীকার করা যায় না। এই সরকার কতটা জনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমাণে ঘটনার অভাব নেই। র‌্যাব-পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাতে গিয়ে সর্বত্র নির্যাতন, গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বক্তব্য চলাকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি সংসদ ও প্রশাসনিক ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। সাংবিধানিকভাবেই দেশে এখন রাশিয়ার জার বা মোগল সম্রাটের মতো এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রহসনে আওয়ামী লীগ যেভাবে নিজেদের জয়ী ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য আসনগুলোতে ভোটই হয়নি। বর্তমান সরকারকে তাই নির্বাচিত বলার সুযোগ নেই। এজন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, গণফোরাম, সিপিবি-বাসদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে আগ্রহী। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এনডিএফের সঙ্গে আমরা কথা বললেও তাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। এসময় মান্না নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর দাবি করে এই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনও দাবি করেন। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উপনির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন। আওয়ামী লীগকে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নয়। এই সরকার পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ইফতার অনুষ্ঠানে মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এনটিভির হেড অব নিউজ খায়রুল আলম বকুল, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সোহরাব হাসানসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.