ইরাকে মালিকির সময় কি শেষ?

প্রধানমন্ত্রী নুরি আল–মালিকি
নিজ দেশে সমালোচকের অভাব নেই৷ বিদেশি সমর্থকেরাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ একসময় যে আমেরিকা দৃঢ় সমর্থন জুগিয়েছিল, তারাও এখন সমালোচনায় সরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির অবস্থা এখন এমনই৷ শিয়াপন্থী এই নেতার ‘সাম্প্রদায়িকতা’র কারণেই দেশটিতে সুন্নি জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ৷ এমন প্রেক্ষাপটে মালিকির সময় ফুরিয়ে আসছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷ বর্তমােন ৬৩ বছর বয়সী মালিকি ২০০৬ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল ওয়াশিংটন৷ তবে দেশের সুন্নি আরব ও সংখ্যালঘু কুর্দি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না রাখতে পারায় তাঁর প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা যারপরনাই নাখোশ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কেবল অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বই ইরাককে বর্তমানের সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে৷ বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস জেফ্রি মনে করছেন, ওবামার ওই মন্তব্য দৃশ্যত মালিকিকে তিরস্কার করারই নামান্তর৷
২০১২ সালের মাঝামাঝিতে বাগদাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছাড়ার পর বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির ভিজিটিং ফেলো হিসেবে কর্মরত জিফ্রে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে ইরাকের সবাই কিছুটা হলেও ভুলের মধ্যে রয়েছে৷ তবে মালিকি সময়ের ব্যবধানে অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছেন৷’ মার্কিন ভাইস প্রেিসডেন্ট জো বাইডেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল, সেনাপ্রধান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি ও ইরাকে সাবেক শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার ডেভিড পেট্রাউসসহ সবাই এখন মালিকি প্রশ্নে অনেকটা অভিন্ন সুরে কথা বলছেন৷ তাঁরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে মালিকির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন; কেউ কেউ প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনাও করেছেন৷ সমালোচকদের অভিযোগ, শিয়াপন্থী মালিকি দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভুল পথে হেঁটেছেন৷ তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সুন্নি ও কুর্দিদের সঙ্গে করা চুক্তিও পরিত্যাগ করেছেন৷ অথচ এই মালিকিই মার্কিন সামরিক সহায়তায় ২০০৮ সালে প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদরের মিলিশিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে বাহবা কুড়িয়েছিলেন৷ ওই ঘটনার পর সব সম্প্রদায়ের লোকজনই তাঁকে জাতীয় নেতা হিসেবে দেখতে শুরু করেন৷ তবে ২০১০ সালের পর নানা রাজনৈতিক সংকটে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন৷ সর্বশেষ সুন্নিপন্থী জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পর ইরাকে যে সাম্প্রদায়িক সংকট শুরু হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে মালিকি আপসের পথে হাঁটবেন কি না বা হাঁটলেও উতরাতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে৷

No comments

Powered by Blogger.