শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে ক্ষমতার দখল নিয়ে সরকারের সঙ্গে
একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে৷ দুই পক্ষের এই
সহিংসতায় হতাহতের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য
মানুষ৷ রাজধানী বাঙ্গুইতে বিমানবন্দরের পাশে আশ্রয়
নিয়েছে তাদের অনেকে৷ গত ২৯ ডিসেম্বর তোলা
ছবিটি গতকাল বিশ্ব শরণার্থী দিবসে প্রকাশ করা হয়।
সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনেকগুলো দেশে চলছে গৃহযুদ্ধ-লড়াই-সংঘাত৷ এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে৷ বাস্তুহারা মানুষের এই সংখ্যা ২০১৩ সালে পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে গেছে৷ শরণার্থীদের এ সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিিবসির৷ জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গতকাল শুক্রবার বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে বলা হয়, ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে মোট শরণার্থী ছিল পাঁচ কোটি ১২ লাখ৷
এ সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ৬০ লাখ বেশি৷ সিরিয়া, মধ্য অাফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ও দক্ষিণ সুদানে লড়াইয়ের ফলে গত বছর শরণার্থীর সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আর আনুমানিক ৬৩ লাখ মানুষ বছরের পর বছর ধরে, কেউ কেউ কয়েক দশক ধরে, শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছে৷ ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৫ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে৷ আর বাড়িছাড়া হয়ে ৬৫ লাখ মানুষ দেশটির ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে৷ প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর সংগৃহীত নিজস্ব তথ্যের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া তথ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ শরণার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, ২৬ লাখ৷ এরপর সিরিয়া ও সোমালিয়া৷ এ তিনটি দেশের শরণার্থীর সংখ্যা বিশ্বের মোট শরণার্থীর অর্ধেকের বেশি৷ পাকিস্তান, ইরান ও লেবাননেও অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি শরণার্থী রয়েছে৷ এর মধ্যে পাকিস্তানে উদ্বাস্তু হয়েছে ১৬ লাখ মানুষ৷ ইউএনএইচসিআরের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে সহায়তা সংস্থাগুলোর মধ্যে ‘নাটকীয় পরিবর্তন’ এসেছে৷ বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পুরোনো লড়াইগুলো মনে হয় কখনোই শেষ হবে না৷ এসব যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থতার কারণে চড়া দাম দিতে হচ্ছে৷
গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্বে আজ শান্তির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে এবং বেশি বেশি মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ মানবিক সহায়তাকর্মীরা বড়জোর সংকটের উপশম করতে পারেন, কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানই এখন অত্যাবশ্যক৷ তা না হলে আশঙ্কাজনক মাত্রায় লড়াই এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ চলতেই থাকবে৷ অাঞ্চলিক বিবেচনায় এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে শরণার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (প্রায় ৩৫ লাখ)৷ সাব-সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলে এ সংখ্যা ২৯ লাখ৷ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় শরণার্থীর সংখ্যা ২৬ লাখ৷ বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের মধ্যে ১১ লাখ মানুষ অন্য দেশে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছে৷ সিরিয়ার শরণার্থীরা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ দেশটির ৬৪ হাজার ৩০০ মানুষ অন্য দেশে আশ্রয় চেয়েছে৷ এর পরেই রয়েছে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৬০ হাজার ৪০০ জন) এবং মিয়ানমার (৫৭ হাজার ৪০০ জন)৷ আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই উন্নত দেশগুলোতে যেতে চান৷ সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে জার্মানিতে৷ এ ছাড়া মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ২৫ হাজার ৩০০ শিশুও ভিন দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছে৷ বিশ্বজুড়ে স্থানীয়ভাবে বাস্তুচ্যুত লোকের সংখ্যা তিন কোটি ৩৩ লাখ৷

No comments

Powered by Blogger.