মাঠ গরম কর্মসূচি নয়

রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তা। ৩ নভেম্বর সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মহাসমাবেশের পরদিন থেকে টানা তিন দিনের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের। নির্বাচনকালীন যে সময়ে দেশ এখন প্রবেশ করেছে, তখন যেখানে শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতার পরিস্থিতি বিরাজ করার কথা, সেখানে অব্যাহত সহিংসতা ও সামনে আরও সংঘাতের আশঙ্কাই জোরদার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বলে আসছি যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে, তা মিটমাট করার একমাত্র পথ হচ্ছে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই তা শুরু করতে হবে। আলোচনা শুরুর উদ্যোগ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে টেলিফোনে যে কথাবার্তা হয়েছে, তা হতাশাজনক হলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনায় বসার ব্যাপারে দুজনই তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ফলে যেকোনো ধরনের মাঠ গরম কর্মসূচির আগে দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের বিষয়টিই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে ধরনের উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। নির্বাচনকালীন সময়ের শুরুতেই ৬০ ঘণ্টার টানা হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হওয়ার পরও সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি। এই কর্মসূচির বলি হয়েছেন ১৩ জন। ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বরের কর্মসূচি কি হরতাল, না অবরোধ, তা এখনো স্পষ্ট করেনি ১৮-দলীয় জোট। কিন্তু এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
টেলিফোন আলাপে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুজনেই যখন আলোচনার কথা বলেছেন এবং বিশেষ করে, বিরোধী দলের নেতা ২৯ অক্টোবরের পর যেকোনো দিন আলোচনায় বসতে পারেন বলে জানিয়েছেন, তখন এই আলোচনা শুরু করতে সমস্যা কোথায়? আমরা এখন দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে দেখতে চাই, কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখতে চাই না। রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতায় এরই মধ্যে অনেক প্রাণ ঝরেছে, সম্পদ ধ্বংস হয়েছে এবং দেশের অর্থনীতির চরম সর্বনাশ হয়েছে। সামনে যেসব টানা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। মহাজোট ৩ নভেম্বর মহাসমাবেশ করতে চাইছে, আমরা মনে করি, এটা নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের সময় নয়, আলোচনা ও সমঝোতার সময়। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষের উচিত ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বরের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলোচনা ও সমঝোতার ব্যাপারে নিজেদের আন্তরিকতার প্রমাণ দেওয়া। মুখে সংলাপ ও সমঝোতার কথা বলে সরকার ও বিরোধী দল যদি তাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে না পারে, তবে সামনের দিনগুলোতে যে সংঘাত ও সহিংসতা চরমে পৌঁছাবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দুই পক্ষকেই এর দায় নিতে হবে। আশা করব, দুই পক্ষই মাঠের কর্মসূচি বাদ দিয়ে আলোচনা ও সংলাপকেই তাদের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.