গোলাম আযমের শাস্তি-আশাহত হলো জাতি

জামায়াতের সাবেক আমির, একাত্তরের নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের 'মাস্টারমাইন্ড' গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি-সংশ্লিষ্টতা, হত্যা ও নির্যাতন- এই পাঁচ অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ে একাত্তরের হত্যাযজ্ঞকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই শীর্ষ অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তিই ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা ও দাবি। ফলে জাতি আশাহত, ক্ষুব্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তৎকালীন সামরিক শাসকের কৃপায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের প্রধান হিসেবে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আসনে আসীন গোলাম আযম কেবল নিজের কৃত অপরাধের জন্যই দায় বহন করেন না, বরং তাঁর ঊর্ধ্বতন অবস্থানের কারণে তাঁর অধীনস্থ এবং প্রভাবাধীন সাংগঠনিক পরিকাঠামোর অধীনে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কৃত অপরাধের দায়ও তাঁর ওপর বর্তায়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন আমাদের অহংকার। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর এ দেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর নৃশংসতার বিষয়টি এ দেশের মানুষ সম্যক জ্ঞাত। পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে যেমন এরা কাজ করেছে, তেমনি প্রত্যক্ষভাবেও এরা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত। বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে গত ২১ জানুয়ারি শুরু হয় জাতির সবচেয়ে বড় কলঙ্কমোচনের পালা। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার রায় হয়েছে। শিগগিরই হয়তো আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মামলার রায় হবে।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণার পর ওই দিনই হরতালের ঘোষণা দেয় জামায়াত। হরতাল আহ্বানের পরপরই রাজধানীতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। দেশজুড়ে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। হরতালের দিনও থেমে থাকেনি জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব। রাজনৈতিক কার্যকলাপের নামে এ-জাতীয় তাণ্ডব কঠোর হাতে দমন করা উচিত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত প্রথম রায়ের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোলাম আযমের মামলার রায় হলো। সামনে আরো অনেক মামলা আছে। এই মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত যে মন্তব্য করেছেন, যে দুর্বলতার কথা বলেছেন, আমরা আশা করব, প্রসিকিউশন সেদিকে দৃষ্টি দেবে। দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হবে।

No comments

Powered by Blogger.