ভূমি কর্মকর্তার বেতন স্কেল-স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার কাম্য

খাজনা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধের তদন্তকাজ, সরকারি ভূমির রক্ষণাবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নিয়োজিত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তারা।
একসময় জমিদারদের ইজারাদাররা জমির খাজনা আদায়ের কাজ করত। দেশের চার হাজার ৩৬৩টি তহশিল অফিসে কর্মরত এই কর্মকর্তাদের ওপর সরকারের বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় নির্ভর করে। পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থাপনায়ও তাঁদের ভূমিকা বিশাল। শুধু রাজস্ব আদায়ই নয়, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতামুক্ত সমাজ গঠনেও তাঁদের ভূমিকা রয়েছে। এমন অবস্থায় সংগত কারণেই কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁদের অবস্থান ও পারিশ্রমিক নির্ধারণের দাবি করা যৌক্তিক। সেই যৌক্তিকতা সরকারও মেনে নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সমমর্যাদাসম্পন্ন সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের তুলনায় তাঁদের বেতন-ভাতা ছিল কম। এই বেতন বৈষম্য দূরীকরণের যৌক্তিকতা বোঝার পর সরকার দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা বাস্তবায়নের মুখে এসে বন্ধ করে দেওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তার দাবি মেনে নিয়ে তাঁদের যে প্রেরণা দেওয়া হয়েছিল, তা কোনো কারণে বন্ধ করে দেওয়া হলো তা বোঝা যাচ্ছে না। সরকারি ভাষ্য হিসেবে যেটুকু বোঝা যায়, কালেক্টরেট সহকারী সমিতির আন্দোলনের কারণে ভূমি কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এটা মোটেও যুক্তিসংগত বলে মনে হয় না। কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মচারীদের দাবি আন্দোলনের মুখে অন্যদের জন্য প্রযোজ্য কোনো সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়া ঠিক নয়।
প্রজাতন্ত্রের কর্মীদের বেতন বৈষম্য থাকাটা সংবিধানের আলোকেও সিদ্ধ নয়। সে ক্ষেত্রে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো যায়। আবার একই সঙ্গে সেই অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কৌশল হিসেবে অন্য প্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টাও সঠিক নয়। বিষয়টির যৌক্তিকতা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ যথাযথ অনুধাবন করেছে। তারা প্রত্যেকেই সম্মতিও জানিয়েছে। তাদের সম্মতির কারণে যথাবিহিত গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থগিতাদেশের কোনো যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের জন্য নতুনভাবে স্থিরীকৃত মাসিক বেতনাদি ও প্রাপ্য অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.