'বিভক্তিটা কত দিন চলবে এটাই এখন দেখার বিষয়'

সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোটা পদ্ধতির কারণে নিয়োগে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে সরকারি কর্মকমিশনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এস এম এ ফয়েজ বলেছেন,
কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিভক্তিটা কত দিন চলবে এটাই এখন দেখার বিষয়। তিনি বলেন, 'একটি উন্নয়নশীল দেশে এ ধরনের বিভক্তি চলতে পারে না। কারণ মেধার চেয়ে যদি কোটার প্রাধান্য বেশি হয়ে যায়, তবে তা কোনোভাবেই মেধাবীদের জন্য ও দেশের জন্য কল্যাণকর নয়।' তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতি প্রকৃত মেধাবীদের হতাশ করে তুলবে। তাই যারা কোটায় আসবে তাদেরও মেধার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।' তিনি আরো বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাদের আরো মেধার জায়গায় যেতে হবে। কোটা পদ্ধতি থাকার কারণে তারা এখন সে রকম প্রস্তুতি নেয় না। মেধার মাধ্যমে সিলেকশন হলে তাদের প্রস্তুতিও থাকবে চোখে পড়ার মতো।'
রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ২৪-এর সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক টক শো মুক্ত বাক অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ-ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা'দত হুসাইন ও মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, আজকে মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে যে কোটা পদ্ধতি চালু আছে, তা অনেক দিন থেকেই কোটা বাড়তে বাড়তে এখন ৫৬ শতাংশ হয়ে গেছে। কিভাবে এটাকে পুনর্মূল্যায়ন করা যায়।
জবাবে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'একসময় ছিল, যখন সময়ের প্রয়োজনেই সমাজের অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সমাজের অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেকে এখন আর পিছিয়ে নেই। সব এলাকাতেই পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পড়ালেখার সুযোগ কমবেশি সবাই পাচ্ছে। তাই বলব, এখন আর গণহারে কোটা রেখে মেধার বিকাশ রুদ্ধ করার কোনো কারণ নেই।' তিনি বলেন, 'আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমার মনে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কোটা আগে সংস্কার করা উচিত।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে যে কোটা আছে, তাতে কি মনে হয় না, এ নিয়ে মেধাবীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার হওয়া দরকার কি না।
জবাবে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা'দত হুসাইন বলেন, 'অনেক বিষয়ে তো কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটাটাই সবচেয়ে বেশি।' তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতি যেভাবেই সংস্কার করা হোক না কেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই বেশি সমস্যা। এ কোটা পরিবর্তন করতে গেলে আবারও পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশন টক শোতে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠবে। তাই এই কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে হলে একটি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হবে। না হলে নানা মহল থেকে আপত্তি উঠতে পারে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক জানতে চান, এমনিতেই আমাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে অনেক বছর চলে যায়। তার ওপর যদি আবার একেকবার বিসিএস পরীক্ষা দিতে এক থেকে দেড় বছর চলে যায়, তবে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থাকে না। এটাকে আরো কম সময়ে করা যায় কি না।
জবাবে ড. সা'দত হুসাইন বলেন, 'এটা কম করার সুযোগ কিভাবে করা হবে। কারণ এখন আজকে যে রেজাল্ট দেওয়া হলো; তাতে ৪৬ হাজার টেকানো হয়েছে। এর মধ্যে যদি লিখিত পরীক্ষায় ৩০ হাজারও টেকানো হয়, তবে এ ৩০ হাজারের ভাইভা নিতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। তাহলে বলা যায়, একেকটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই বছর লেগে যায়। তাহলে এ সময় কমানো যাবে কী করে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে ড. জাফরুল্লাহ খান বলেন, 'কোটা পদ্ধতির ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের চাকরিতে যোগদানের সময় বাড়াতে হবে। কারণ তারা সেশনজটের কারণে পড়ালেখা ঠিকমতো শেষ করতে পারে না।' আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতি থাকা উচিত না। দেশে কমপক্ষে এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যাঁরা কোটিপতি। এ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের তো আর কোটা দেওয়ার দরকার নেই।' তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতি বাদ দিয়ে মেধা কোটা কমপক্ষে ৮০ শতাংশ থাকা দরকার। তাহলেই দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.