অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই সিসির-জনতা চেয়েছে বলেই মুরসিকে সরানো হয়েছে

মিসরে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি। তাঁর দাবি, জনগণের ভোটের অমর্যাদা করেছেন ইসলামপন্থী মুরসি।
তাই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে তাঁকে সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে। গতকাল সোমবার এসব কথা বলেন সিসি।
গত ৩ জুলাই মুরসিকে অপসারণের পর এই প্রথম জনসম্মুখে মুখ খুললেন সিসি। গতকাল মুরসির সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। মুরসিকে স্বপদে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামপন্থীরা। রাজপথ ছাড়েনি মুরসিবিরোধীরাও। এদিকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বিল বার্নস কায়রো গেছেন। গতকালই সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল তাঁর।
সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় ৯ নেতাসহ ১৪ জনের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। মুরসির অপসারণের দিন থেকে চারটি ঘটনায় এ তদন্ত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে গত ৮ জুলাই রাজধানী কায়রোর প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদর দপ্তরে সংগঠিত সহিংসতার ঘটনাও রয়েছে। ওই ঘটনায় ৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। গতকাল এই সদরদপ্তরের বাইরে মুরসি সমর্থকদের বিক্ষোভ করার কথা ছিল।
মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণের স্বপক্ষে সিসি গতকাল বলেন, ৩০ জুন গণবিক্ষোভের আগে জনগণের দাবি আমলে নিয়ে গণভোট দিতে অস্বীকৃতি জানান মুরসি, 'আমি মুরসির কাছে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে গণভোট আয়োজনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তিনি তা খারিজ করে দেন।' ওই প্রতিনিধিদলে মুরসির প্রধানমন্ত্রী এবং একজন বিশ্বস্ত আইন বিশেষজ্ঞ ছিলেন বলে জানান সিসি। সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে সিসি বলেন, 'জনগণের আদেশ মান্য করা তাদের (সামরিক বাহিনী) কাজ, জনগণকে আদেশ দেওয়া নয়। সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হয়েছে, কারণ, সেনাদের কাছে জনগণ তা-ই দাবি করেছিল।' সিসি বলেন, মিসরের জনগণের এই উপলব্ধি আছে, 'বিচ্যুতি থেকে কোনো কিছুকে সঠিক স্থানে ফিরিয়ে নিতে' পারে একমাত্র সেনাবাহিনীই।
বার্নসের কায়রো সফর প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে জানায়, 'সব ধরনের সহিংসতা বন্ধসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে' অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেবেন তিনি। সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনীর মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে এখনো 'অভ্যুত্থান' আখ্যা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, তাহলে কায়রোকে দেওয়া বার্ষিক ১৫০ কোটি ডলারের সহযোগিতার ব্যাপারটি আইনগতভাবে স্থগিত করতে হবে তাদের। তবে গত রবিবার রিপাবলিকান দুই প্রভাবশালী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও জন ম্যাককেইন মিসরের সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সাহায্য স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এই দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন দ্রুত নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে মিসরের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সূত্র : জিনিউজ, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.