'কোনো সহিংসতাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য শুভ নয়''কোনো সহিংসতাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য শুভ নয়'

হরতালকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুর ও মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেছেন, কোনো সহিংসতাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য শুভ নয়।
রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতালের নামে সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, হরতাল ডাকা রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে হরতালের নামে মানুষের জানমালের ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই। তিনি হরতালের আগের দিন জামায়াত-শিবিরের গাড়ি ভাঙচুর ও ত্রাস সৃষ্টির বিরোধিতা করে বলেন, তিন নেতার বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত হরতাল না দিয়ে অন্য কোনো কর্মসূচি দিতে পারত। আগে উচিত ছিল মামলার বিষয়ে আইনি মোকাবিলা করা। তবে তিনি এও বলেছেন, আদালতে বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রতা বিচার প্রার্থীকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক মামুন এ কথা বলেন।
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আমেনা মহসীন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, সিটি নির্বাচন চলছে, সংসদে বাজেট আলোচনাও হচ্ছে। এর মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটল যে হরতাল দেওয়া হলো? আর হরতাল মানেই তো জণসাধারণের দুর্ভোগ। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জবাবে অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, আমাদের দেশে কথায় কথায় হরতাল করা একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। জামায়াতের আজকের হরতাল দেওয়ার মতো কোনো কারণ ছিল না। এর পরও হরতাল ডেকেই গাড়ি ভাঙচুর করা, সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ করা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই রাজনীতি করেছে। তবে আওয়ামী লীগ সুকৌশলে জামায়াতের সঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিএনপি পারেনি। জামায়াত এখন বিএনপির জন্য লায়াবিলিটি। বিএনপিকে ভোটের রাজনীতি করতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া উচিত। তিনি বলেন, জামায়াতের মতো এ রকম দল বিশ্বে অনেক দেশেই আছে। তাই বলে তাদের নিষিদ্ধ করা যায় না। তবে যুদ্ধাপরাধের জন্য তাদের অনেক আগেই বিচার হওয়া উচিত ছিল।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক মোস্তফা ফিরোজ আলোচকদের কাছে জানতে চান, জামায়াতের হরতাল তো আগামীকাল। কিন্তু আজ বিকেলে হরতাল ডেকেই তারা রাজধানীর বিজয়নগরে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। কেন?
জবাবে অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, এটা অবশ্যই অপরাধ। হরতালের নামে তারা মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারে না। কোনো সহিংসতাই জনগণ পছন্দ করে না। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির একটি নির্বাচনী জোট আছে। বিএনপি কিন্তু জামায়াতের এ হরতালে সমর্থন দেয়নি। তবে আগে কয়েকটি হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল এ কারণে যে সরকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার সব রাজনৈতিক দলের আছে।
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, আপনারা যেভাবে বলছেন, মনে হয় আজই হরতাল ডেকে জামায়াত গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল হরতাল ডেকে সহিংসতা করেনি? অথচ আমাদের জানা মতে, হরতাল ছাড়াও রাজধানীর মিরপুরে যুবলীগ বা ছাত্রলীগের এক নেতাকে অপহরণ বা আহত করার ঘটনায় ওই দিন ২০০ থেকে ৩০০ গাড়ি ভাঙচুর করেছে সরকারি দলের লোকরাই। তখন কোনো সমালোচনা হয়নি। এমনকি হরতালের সময় রাজধানীতে গাড়িতে গান পাউডার মেরে অগ্নিদগ্ধ করে মানুষ মারারও নজির রয়েছে।
জবাবে অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, আমরা তো শুধু একটি দলের কথা বলিনি, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতেও এমনটি করেছে। তিনি বলেন, বিরোধী দলে গেলেই রাজনৈতিক দলগুলো হরতালের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করে। এটা মনে হয় একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.