সৌদিতে দালালের দৌরাত্ম্য-দ্রুত ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকদের অবদান বিশাল। অথচ এই শ্রমিকদেরই কপালে জোটে দুর্ভোগ। ভিটামাটি বিক্রি করে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া অনেক শ্রমিক অবৈধ উপায়ে অবস্থান করছে।
একমাত্র সৌদি আরবেই এমন শ্রমিকের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সে দেশের সরকার এসব অবৈধ শ্রমিককে বৈধতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বাংলাদেশের সামনে বড় একটি সুযোগ এসেছে। সরকার সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সৌদিতে নতুন পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেখানেও দালালচক্র সোচ্চার। অভিযোগ এসেছে, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারাও দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে। এ কারণে পাঁচ লক্ষাধিক অবৈধ শ্রমিকের প্রায় এক লাখই পাসপোর্ট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে এরই মধ্যে ২২ হাজার শ্রমিক আউটপাস সংগ্রহ করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য মোটেও শুভ সংবাদ নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। পাঁচ লাখের অধিক শ্রমিকের পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য মাত্র ৫৪ জন কর্মীকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের পক্ষে কোনো অবস্থায়ই এত পাসপোর্ট প্রদান করা সম্ভব হবে না। ফলে লক্ষাধিক শ্রমিককে দেশে ফিরে আসতে হবে।
পাসপোর্টের চাহিদা ও পাসপোর্ট প্রদানের সক্ষমতা- এ দুইয়ের পার্থক্য জানার পরও সরকারিভাবে দ্রুত কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, হাতে যে সময় আছে, তাতে সবাইকে পাসপোর্ট দিতে গেলে সেখানে আরো জনবল নিয়োগ করতে হবে। তাই কালবিলম্ব না করে পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য সেখানে জনবল নিয়োগ করা হোক।
একই সঙ্গে সেখানে পাসপোর্টপ্রত্যাশী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ ও দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। লক্ষাধিক লোক যদি দেশে ফিরে আসে তাহলে রেমিট্যান্সে কুপ্রভাব পড়বে। অবৈধভাবে সৌদি আরবে অবস্থানকারী অনেকেই মিয়ানমারের নাগরিক বলে জানা যায়। বাংলাদেশিদের সুযোগবঞ্চিত করে মিয়ানমারের নাগরিকদের সুবিধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তৈরি শ্রমবাজার ও বিনা খরচে প্রাপ্ত এই সুযোগ হাতছাড়া করলে এর দায় পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপর। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দালালচক্র, বিশেষ করে অতি মুনাফালোভী শ্রমিক রপ্তানিকারকদের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার যে সুনাম সরকার অর্জন করেছে, তাকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে এই ব্যর্থতা। আর তার মাসুল গুনতে হবে সরকারকেই। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নড়েচড়ে উঠতে হবে অতিদ্রুত।

No comments

Powered by Blogger.