ঠাকুরগাঁও কম দামে ধান কিনে নিচ্ছেন চালকলমালিক ও মজুতদারেরা

ঠাকুরগাঁওয়ে মজুতদার ও চালকলের মালিকেরা ফড়িয়াদের মাধ্যমে বোরো ধান কিনে মজুত করা শুরু করেছেন। ঋণ পরিশোধের জন্য কৃষকেরা এসব ফড়িয়ার কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কম দামে কেনা এসব ধান চালে পরিণত করে মজুতদার ও চালকলের মালিকেরা সরবরাহ করবেন সরকারি খাদ্যগুদামে। এতে কৃষকেরা বঞ্চিত হলেও মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে লাভবান হবেন মজুতদার ও চালকলের মালিকেরা।
সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ী, মাদারগঞ্জ ও চৌধুরীহাটে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি মণ ভেজা বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। শুকানো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। ফড়িয়াদের বেঁধে দেওয়া এই দরে ধান বিক্রি করছেন কৃষকেরা।
খোঁচাবাড়ী হাটে ধান বিক্রি করতে আসা জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক রামনাথ বর্মণ বলেন, ‘হাটে ধান নিয়ে গেলেই পাইকারেরা ঘিরে ধরে। সবাই মিলে একটাই দাম হাঁকায়। এখন অবস্থা এমন হয়েছে, ফড়িয়ারা যদি ধানের দাম ৩০০ টাকা মণ বলে, তা-ও আমাদের বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।’
মাদারগঞ্জ হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আবদুর রহিম বলেন, তিন বিঘা জমি বর্গা নেওয়ার পর ঋণ নিয়ে তিনি বোরোর আবাদ করেন এবার। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের যে দাম, তাতে তাঁর হাতে আর কিছুই থাকছে না। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকারি গুদামগুলো ভেজা ধান নেয় না। সেখানে ধান বিক্রি করতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।’
চাউলকল মালিক সমিতির সদস্য হায়দার আলী বলেন, ‘আমরা মুনাফার জন্যই ব্যবসা করি। কম দামে ধান কিনে তা থেকে চাল বের করে সরকরি দরের সুযোগ আমরা নিতেই পারি।’
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, দরিদ্র কৃষকেরা ধান বিক্রি করে ঋণের টাকা শোধ করেন। তাঁদের পক্ষে ধান মজুত রাখা সম্ভব নয়।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে দুই হাজার ৪৯ মেট্রিক টন ধান ও ৫৬ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকার প্রতি কেজি ধান ১৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং প্রতি কেজি চাল ২৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। ২ মে থেকে ধান-চাল কেনা শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মো. রায়হানুল কবির বলেন, ধান শুকিয়ে গুদামে নেওয়ার সুবিধা তাঁদের নেই। এ কারণে তাঁরা ভেজা ধান কেনেন না। আর এই সুযোগ নিচ্ছেন মজুতদার ও চালকলের মালিকেরা।

No comments

Powered by Blogger.