‘ধর্মে অশিক্ষিত’ শাহবাগি তত্ত্বগুরু যখন ‘মুফতি’ by আহমদ বাসির

ধর্মদ্রোহী শাহবাগি ব্লগার চক্রের অন্যতম তত্ত্বগুরু মুনতাসীর মামুনের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন-হাদিসের সম্পূর্ণ বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠ-এর উপসম্পাদকীয় কলামে ‘ধর্ম ও রাষ্ট্র কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি’ শিরোনামের লেখাটি নিয়ে এ অভিযোগ ওঠে।
ওই লেখায় মুনতাসীর মামুন পবিত্র কোরআন-হাদিসের সম্পূর্ণ বিপরীত ও বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়ার পাশাপাশি আলেম-ওলামাদের ‘ইসলামব্যবসায়ী’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ বলে প্রতিপন্ন করেন। ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণ ব্লগার রাজীব ওরফে থাবাবাবার পক্ষ নিয়ে তিনি দৈনিক আমার দেশসহ বেশকিছু গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও বিষোদ্গার করেন লেখাটিতে। মুনতাসীর মামুন দাবি করেন, কোরআন-হাদিসের কোথাও ‘মুরতাদ’ শব্দটি নেই। তার মতে, ধর্মদ্রোহী তথা মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, এটা ‘উলেমা’দের মিথ্যা কথা।
মুনতাসীর মামুনের লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পবিত্র কোরআন-হাদিসের সম্পূর্ণ বিপরীত ও বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া এবং বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলিম জনগণের পরম শ্রদ্ধেয় আলেমসমাজকে ‘ধর্মব্যবসায়ী’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ বলায় ফেসবুক ও ব্লগে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ২৭ মার্চ লেখাটি চ্যালেঞ্জ করে লেখক ও গবেষক ফিরোজ মাহবুব কামাল তার ব্যক্তিগত ব্লগে ‘মুনতাসীর মামুনের মুরতাদ প্রসঙ্গ ও হাসিনার হেলে পড়া কুরসিতে শক্ত ধাক্কা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেন। এ লেখাটিতে পবিত্র কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন উদ্ধৃতি পেশ করে দেখানো হয়, কীভাবে মুনতাসীর মামুন কোরআন-হাদিসের সম্পূর্ণ বিকৃত ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, “মুরতাদ মানে কী? ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ফিরে যাওয়া। মৌলানারা মনে করেন, অর্থাত্ তারা যদি মনে করেন ইসলাম কেউ ত্যাগ করেছে, তাকে মুরতাদ বলা ও তার ওপর হামলা করা। এটাই উলেমাদের মত। কোরআন বা রাসুলের (সা.) নয়। ‘উলেমাদে’র কাছে আমরা তো দেশ আর ধর্ম ইজারা দিইনি।” এখানে ‘হামলা করা’ শব্দ দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুনতাসীর মামুন কোথায় শুনেছেন এ শব্দ দুটি, একমাত্র তিনিই তা বলতে পারবেন। বাংলাদেশের আলেম সমাজ সবসময় ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন, জনস্বীকৃত আলেমদের কাউকে কখনও কোনো ধর্মদ্রোহীর ওপর হামলা করার নির্দেশ দিতে আমরা শুনিনি।
মুনতাসীর মামুনের লেখাটিতেই পরোক্ষ স্বীকারোক্তি রয়েছে, তিনি মূলত ওলামাদের মিথ্যেবাদী প্রতিপন্ন করার জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ‘কোরানসূত্র’ অনুসন্ধান করেছেন, প্রকৃত বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য নয়। ফলে পবিত্র কোরআনের ওই আয়াতগুলোই তার চোখে পড়েনি যেগুলোতে তার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাব রয়ে গেছে। পবিত্র কোরআনের সুরা আল মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে ধর্মদ্রোহীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে ফ্যাসাদ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো এই যে—তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা তাদের হস্তপদগুলো বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ সুরা তওবার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামাজ কায়েম করে আর জাকাত আদায় করে, তবে তোমাদের দীনী ভাই (অর্থাত্ মুসলমান)। আর আমি বিধানগুলো জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য সবিস্তারে বর্ণনা করে থাকি। আর যদি তারা তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর (অর্থাত্ ইসলাম গ্রহণের পর) ভঙ্গ করে এবং বিদ্রূপ করে তোমাদের দীন সম্পর্কে, তবে (এসব) কুফরপ্রধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কোনো শপথ নেই, যাতে তারা ফিরে আসে।’ সুরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দীন (ধর্ম) থেকে ফিরে যাবে এবং ওই অবস্থায় মারা যাবে, তাদের সব আমল (সওয়াব) বিনষ্ট হয়ে যাবে। তারা দোজখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।’ সুরা মায়েদার ৫৪ নম্বর আয়াতেও মুরতাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া মুরতাদদের শাস্তির ব্যাপারে সহি বুখারি শরিফের একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মান বাদ্দালা দীনাহু, ফাকতুলুহু’ অর্থাত্ ‘যে ব্যক্তি দীনকে পাল্টে নিল, তাকে হত্যা করো।’
মুনতাসীর মামুন তার লেখায় আলেম-ওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদদের কাছে অস্বীকৃত বিচারপতি হাবিবুর রহমানের (মুহম্মদ হাবিবুর রহমানকে তিনি হাবিবুর রহমান লিখেছেন) ‘কোরান সূত্র’ গ্রন্থ থেকে পবিত্র কোরআনের সাতটি আয়াত পেশ করে বলেন, কোরআনসূত্র বইয়ে মুরতাদ শব্দ নেই। অথচ মুনতাসীর মামুনের উদ্ধৃত সাতটি আয়াতেই অমুসলিমদের ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে, মুরতাদদের ব্যাপারে নয়। মুনতাসীর মামুন নিজেও তার লেখায় স্বীকার করেছেন, অমুসলিমদের মুরতাদ বলা যায় না।
মুনতাসীর মামুন উদ্ধৃত আয়াতগুলো প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান আলেম নূর হোসাইন কাশেমী বলেন, পবিত্র কোরআনে অমুসলিমদের সম্পর্কে বলা হয়েছে—‘দীনের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই’। অর্থাত্ যারা বিধর্মী, তাদের জোর করে মুসলমান বানানো যাবে না। যে মুসলমান হবে, স্বেচ্ছায় হবে। কিন্তু যখন একজন মানুষ মুসলমান হয়ে যায়, তখন তার আর স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ থাকে না। তখন তাকে ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। কত ধর্ম ও মতবাদের মানুষই তো আমাদের সমাজে বসবাস করে। তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে কেউ তো বাধা সৃষ্টি করেনি। ইসলাম এটি অনুমোদনও করে না। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য আমাদের প্রশংসা রয়েছে। কিন্তু যখন কোনো মুসলমান ঘরের সন্তান নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামি বিধিবিধান সম্পর্কে চরম ব্যঙ্গাত্মক ভাষা ব্যবহার করে ইসলামকে আক্রমণ করে, তখন কি আর আল্লাহপ্রেমিক, নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রেমিক মুসলমান বসে থাকতে পারে?’ ধর্মত্যাগী ও ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের শাস্তি প্রসঙ্গে সহি বুখারি শরিফের ২৩৩ নম্বর হাদিস উদ্ধৃত করে আলেম কাশেমী বলেন, ‘উরায়ানা গোত্রের চারজন এবং উকায়েল গোত্রের তিনজনকে নবী (সা.)-এর আমলে ধর্মদ্রোহের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিবরণ রয়েছে।’ ‘শামায়েলে তিরমিজি’র উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইবনে খাতাল নামে এক ব্যক্তিকে ধর্মদ্রোহের অপরাধে মক্কা বিজয়ের দিনে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা সত্ত্বেও মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ধর্মদ্রোহের শাস্তির বিধান কার্যকর করা হয়েছিল।’ এ প্রসঙ্গটি রাসুল (সা.)-এর প্রাচীন জীবনীগ্রন্থ ‘ইবনে হিশাম’-এ বর্ণিত আছে। মক্কা বিজয়ের দিন রাসুল (সা.) ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করা সত্ত্বেও যে ক’জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুদণ্ডের কারণ ছিল ধর্মত্যাগ। অর্থাত্ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা আবার তা প্রত্যাখ্যান করে। এদেরই একজন আবদুল্লাহ ইবনে খাতাল। দ্বিতীয়জন হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে সা’দ। এই ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে মদিনায় হিজরত করে। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে ওহি লেখার কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। কিছুদিন পর আবদুল্লাহ ইসলাম ত্যাগ করে আবার মক্কায় ফিরে যায়। [সিরাতে রাসুলুল্লাহ, ইবনে ইসহাক/ইবনে হিশাম, মুস্তফা সাক্কা প্রমুখ সম্পাদিত দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৪০৯-৪১০; আলফ্রেড গুইলাম কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদ, পৃ. ৫৫০]
ধর্মত্যাগী ও ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের শাস্তি প্রসঙ্গে মুনতাসীর মামুন যে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার করেছেন এবং কোরআন-হাদিসের সম্পূর্ণ বিকৃত ও বিপরীত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা পবিত্র কোরআন-হাদিস ও সিরাত গ্রন্থের উদ্ধৃতি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। মুনতাসীর মামুন জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার হীন উদ্দেশ্যে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যের সঙ্গে লেখেন, ‘৭১টি ফিরকার সবাই মসজিদে নামাজ পড়তে যান। সেক্ষেত্রে একটি ফিরকার ইমাম শুধু তার ফিরকার পক্ষে বয়ান করতে পারেন না। তাহলে প্রতিটি ফিরকার জন্য ভিন্ন মসজিদ করা কি বিধেয় নয়?’ যখন দল-মত নির্বিশেষে আলেম-ওলামাদের নেতৃত্বে দেশের জনগণ ধর্মদ্রোহী-মুরতাদদের শাস্তির দাবিতে আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তখন মুনতাসীর মামুন ধর্মদ্রোহী ও ধর্মত্যাগী মুরতাদদের পক্ষ নিয়ে কটাক্ষ করে লিখেছেন, “কওমি, নন-কওমি, আহলে হাদিস, সাধারণ জঙ্গি, মধ্যপন্থী সব ‘ইসলামী’ আজ মসজিদকে বেছে নিয়েছে রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে।’’ এমনকি ভয়াবহ বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুনতাসীর মামুন ‘মায়মনি’কে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে স্রষ্টার উপাসনার জন্য নির্মিত সব প্রার্থনালয়কেই মসজিদ বলা হয়েছে।’
ধর্মে অশিক্ষিত মুনতাসীর মামুন জানেন না—শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, খ্রিস্ট, ইহুদি বা হিন্দু ধর্মেও ধর্মদ্রোহী তথা মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইংরেজি ভাষায় ‘ব্লাসফেমি’ একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ খ্রিস্টান ধর্মের উপাস্য ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অমর্যাদাকর, অবজ্ঞামূলক, আক্রমণাত্মক বা শিষ্টাচারবহির্ভূত কিছু বলা বা করা। খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে এমন অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সে শাস্তির কথা বলা হয়েছে ওল্ড টেস্টামেন্টে—‘এবং যে ব্যক্তি প্রভুর নামের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি তথা অপমানকর, অমর্যাদাকর বা শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কথা বলবে বা কিছু করবে, তবে তার নিশ্চিত শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা। সমবেত সবাই তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে’ (বুক অব লেডি টিকস)। অপরদিকে হিন্দু ধর্মে ব্লাসফেমি শুধু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু বলাই নয় বরং কোনো ধর্মগুরু বা পুরোহিতের বিরুদ্ধে বলাও সমান অপরাধ। হিন্দু ধর্মের আইন বিষয়ক গ্রন্থ মনুষস্মতিতে বলা হয়েছে, ‘যদি নিম্নজাতের কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরোহিতকে অবমাননা করে বা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তবে রাজার দায়িত্ব হবে দৈহিক শাস্তি বা প্রাণদণ্ড দেয়া, যাতে সে প্রকম্পিত হয়।’ (মনুষস্মতি)
ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণ রাজীব ওরফে থাবাবাবার পক্ষ নিয়ে মুনতাসীর লিখেছেন, ‘রাজীবের মৃত্যুর পর তার ব্লগে জামায়াতিরা বিকৃত কিছু লেখা দিয়ে কুপ্রচার করল আর আপনারা আল্লাহর বান্দা মনে করেন, অথচ আল্লাহর অন্য বান্দাদের বিরুদ্ধে অসত্য বলবেন—এটি জায়েজ নয়।’ বিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর মতোই মিথ্যাচার করলেন মুনতাসীর মামুন। গত ৬ মার্চ দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ‘দু’হাজার বছর পরও নিরোরা বাঁশি বাজায়’ শিরোনামের মন্তব্য প্রতিবেদনে স্বয়ং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘ব্লগার রাজীবের ফেসবুক পেজে যাবতীয় অশ্লীল ও ইসলামবিরোধী পোস্ট নিশ্চিতভাবে তারই দেয়া। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমার দাবির সমর্থনে মিডিয়ার সামনে যে কোনো স্থানে আমি মন্ত্রী ইনুর সঙ্গে ল্যাপটপ নিয়ে বিতর্ক করতে প্রস্তুত আছি।’ দু’মাস পার হয়ে গেলেও মন্ত্রী ইনু এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস দেখাতে পারেননি।
এদিকে মুনতাসীর মামুন তার রচনায় দৈনিক আমার দেশ এবং এ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার মনের মতো ব্যবস্থা না নেয়ায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘আমি জনাব হাসানুল হক ইনুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে দাঙ্গা উসকে দেয়া হচ্ছে, আপনারা এই পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন, ব্যবস্থা নেয়ার উপায় নেই। ... তিনি পরামর্শ দিলেন, মামলা করুন। বললাম, আমি মামলা করব কেন? আপনারা আছেন কেন? দাঙ্গা যে উসকে দিচ্ছে, সে সম্পাদকের বিরুদ্ধে তো সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন হয়তো; কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর দেননি।’ মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ‘ব্যবস্থা নেয়ার উপায় নেই’ বলাতেই মুনতাসীর মামুনের যত উষ্মা। (বানোয়াট মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার কারণে এতদিনে মুনতাসির মামুন নিশ্চয় আনন্দে ডুগডুগি বাজাতে ও নৃত্য করতে শুরু করেছেন !)
মুনতাসীর মামুন তার রচনায় লেখেন, “মৌলানা শফি ও তার অনুসারীরা বা অন্য ‘উলেমা’রা ইসলাম সম্পর্কে আমাদের চেয়ে সহস্রগুণ বেশি জানেন। কিন্তু ধর্মে অশিক্ষিত হয়েও আমি একটি প্রশ্ন তো করতে পারি। কোরআনে কোথায় লেখা আছে ধর্মত্যাগীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে?’’ স্বঘোষিত ‘ধর্মে অশিক্ষিত’ মুনতাসীর মামুন তার রচনার মাঝামাঝি স্থানে প্রশ্ন করলেও শেষ পর্যন্ত প্রশ্নের জবাব তিনি নিজেই দিয়েছেন এবং আলেম-ওলামাদের বক্তব্যকে ‘অসত্য’ ও তাদেরকে ‘ইসলামব্যবসায়ী’ বলেও প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি নিজে তার রচনায় সুরা বনি ইসরাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তা অনুসরণ করো না।’ অথচ তিনি নিজে ধর্মে অশিক্ষিত হয়েও ধর্মীয় বিষয়ে দেশের সব আলেম-ওলামার (আওয়ামী ওলামা লীগ ও ফরিদউদ্দীন মাসউদসহ) কথাকে বললেন ‘অসত্য’। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, যে ব্যাপারে মুনতাসীর মামুনের জ্ঞান নেই, সে ব্যাপারে মহাজ্ঞানীর মতো কীভাবে তিনি ‘ফতোয়া’ জারি করতে পারেন, কীভাবে তিনি ‘মুফতি’র মতো আমাদের নির্দেশনা দিতে পারেন? উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যাচার করেও তিনি বিপরীতমুখী কথা বলেছেন লেখাটিতে। একদিকে তিনি বলছেন, মুফতি শফী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন; অন্যদিকে তিনিই বলছেন—হেফাজতে ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় ফ্রন্ট!
শাহবাগি তত্ত্বগুরু মুনতাসীর মামুনের লেখাটি যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেই জনকণ্ঠ এ দেশের মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক ও বুদ্ধিবৃত্তির মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে—এ ধারণা বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠিত। ধর্মদ্রোহী তসলিমা নাসরিনের পক্ষাবলম্বন করায় ১৯৯০ এর দশকে পত্রিকাটি নিষিদ্ধের প্রবল দাবি উঠেছিল। বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলামবিরোধী ভূমিকা ও হলুদ সাংবাদিকতার কারণে পত্রিকাটি পাঠকের আস্থা সম্পূর্ণভাবেই হারিয়ে ফেলেছে। শাহবাগ আন্দোলনে প্রবল সমর্থন জুগিয়ে পত্রিকাটির হাজার হাজার কপি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিলি করা হয়েছে শাহবাগ ও অন্যান্য স্থানে। পত্রিকাটির জন্মলগ্ন থেকেই এ পত্রিকাটির একজন একনিষ্ঠ লেখক মুনতাসীর মামুন।

No comments

Powered by Blogger.