রায়ের প্রতিক্রিয়া- যে কারণে মাঠে নামেনি জামায়াত-শিবির by নুর মোহাম্মদ

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের পর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি। লোক দেখানো কয়েকটি ঝটিকা মিছিল করে শেষ করে দিয়েছে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। হঠাৎ করে জামায়াতের এমন নীরব ভূমিকায় রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে।
কথা হচ্ছে কাদের মোল্লা ও সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা চালালেও এই রায়ের পর তারা নীরব কেন? রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে হেফাজত ঢাকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর জামায়াত অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এছাড়া কামারুজ্জামানকে নিয়ে মাঠে নেমে তেমন সাড়া পাবে না। তাই লোক দেখানো প্রতিক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখছে কর্মসূচি। যদিও রায়ের দুইদিন পর রোববার হরতাল ডেকেছে দলটি।

জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিযে এই মূহুর্তে জনবল নষ্ট করতে চায় না তারা। এছাড়া হেফাজত ইস্যু এমনিতেই তাদের ঘাড়ের উপর চেপে আছে।

জামায়াত নেতারা বলছেন, কাদের মোল্লা ও সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে ‍সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে। সেখানে হেরে গেলে তাদের রায় কার্যকর হবে। তখন তাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। তাই এই রায়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এই মূহুর্তে জনবল নষ্ট করতে রাজি নয় দলটি।

তবে জামায়াতের তৃণমূল নেতারা বলছেন, রায়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল আমাদের। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে কোন নির্দেশনা না আসায় মাঠে নামেনি তারা। 

দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এছাড়া ৫ মে হেফাজতের সহিংসতার পর জামায়াত মাঠে নামলে হিতে বিপরীত হতে পারে এমন আশংকাও কাজ করছে তাদের মাঝে।

দলটির অন্যতম শক্তি ছাত্র শিবিরকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। এ বিষয়ে শিবিরের কয়েকজন নেতা বাংলানিউজকে জানান, রায় পরবর্তী কোন নির্দেশনা জামায়াত থেকে আসেনি। তাই আমরাও চুপচাপ থেকেছি।

শিবিরের অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, সবোর্চ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি ছিল শিবিরের। এই প্রথম শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হলো।

উল্লেখ্য, শিবিরের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী শিবিরের দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন কামারুজ্জামান। প্রতিষ্ঠা সভাপতি ছিল মীর কাশেম আলী।

আগেই রায় হওয়া কাদের মোল্লা ছাত্র সংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও অন্য নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ছাত্র রাজনীতি সঙ্গে জড়িত ছিল না।

জানা গেছে, জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম কামারুজ্জামান। দলের মধ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হলেও দলের বাইরে তার তেমন কোন ব্যক্তি ইমেজ নেই। এ কথা মাথায় রেখেই মূলত জামায়াত কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার রায়ের দিন ও রায়ের পরদিন দুইদিন হরতাল দেয় দলটি। একইভাবে হরতাল দেয় দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর সময়ও। কিন্তু এবার রায়ের দিন হরতাল দেয়নি তারা। এমনকি রায়ের দুইদিন পর একদিন হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামীর এক মহানগর নেতা বাংলানিউজকে বলেন, রায়ের দিন ১৮ দলের পূর্ব ঘোষিত হরতাল ছিল তাই এদিন হরতাল দেওয়া হয়নি। রায়ের পর দুইদিন হরতালের পক্ষে অনেকেই মত দিলেও শেষ পর্যন্ত একদিন দিয়েই থেমে যায় তারা।

এ বিষয়ে শিবিরের বর্তমান মুখপাত্র ও সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, “এই প্রথম শিবিরের কোন নেতার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তাই শিবির যথাসময়ে এর প্রতিবাদ করবে।”

রোববারের হরতালে যদি সরকার বাধা দেয় তবে প্রয়োজনে আবারো হরতাল দেওয়া হবে।

তবে জামায়াতের অন্য আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, হরতালে সারাদেশে ব্যাপক কোন ঘটনা ঘটলে এর প্রতিবাদে আবারো হরতালের ডাক দেওয়া হবে। এজন্য হাতে একদিন রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে দল নমনীয় কি না জানতে চাইলে দলটির কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, “মোটেও না। একদিন হরতাল এটা আমাদের একটি টেকনিক। রোববারের হরতালে বাধা দিলে প্রয়োজনে আবারো হরতাল অবরোধের ডাক দিবো।”
এ ইস্যুতে পিছন ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ০৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে হত্যা, লুটপাট সহ ২টি অভিযোগে ফাঁসি দেয়। এছাড়া ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.