নাস্তিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে by মোহাম্মদ রাহিদুল হাসান

ধর্ম মানব জীবনের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। একথা নিশ্চিতভাবে জানি, ধর্মে বিশ্বাস না করা লোকের সংখ্যা বর্তমান দুনিয়ায় নেহাত্ কম নয়। যাদের আমরা নাস্তিক বলে জানি। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় কোথায় যে, এখনও ধর্মে বিশ্বাস করা লোকের সংখ্যা এই পৃথিবীতে নাস্তিকদের তুলনায় কয়েক লাখ গুণ বেশি।
কিন্তু আফসোস নিয়ে এই লেখা শুরু করছি যে, বর্তমান দুনিয়ায় নাস্তিকরাই দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে আর সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী লোকেরা কেমন যেন সার্কাসের কৌশল শিখিয়ে দেয়া প্রাণীর মতো মাস্টারের চাবুকের ভয়ে দর্শকদের মজা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি আপাদমস্তক একজন ধর্মভীরু মানুষ। মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আমার বেঁচে থাকার মূল চালিকাশক্তি। তাই বলে অন্য ধর্ম বা অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আমার কোনো বিরূপ মনোভাব নেই। আর তাই যখন দেখি চারদিকে কেবল নাস্তিক্যবাদের জয়জয়কার, তখন আমার মনের কোণে অমাবস্যার কালো অন্ধকার নেমে আসে। মানুষকে ধর্ম থেকে, ধর্ম-কর্ম থেকে— মোট কথা সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত করার যে ঘৃণ্য অপচেষ্টা আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। যার করুণায় এই দুনিয়ার আলো-বাতাস-পানি উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছি, আজ সেই মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভুলিয়ে দেয়ার কি জঘন্য অপতত্পরতা! ৯০ ভাগ মুসলমানের এই সোনার বাংলায়ও আজ সেই অপতত্পরতা স্পষ্ট লক্ষণীয়। আজ বাংলাদেশে শুধু ধর্মই নয়, বরং ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার একটা অপতত্পরতাও স্পষ্টই লক্ষণীয়। তবে কি যত শত্রুতা সব ইসলাম আর কোরআনের বিরুদ্ধে? যত শত্রুতা সব আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে? নব্যুয়তপ্রাপ্তির আগে মহানবী (সা.)-কে বিশ্বাস করত না এমন মানুষ তত্কালীন আরবে একজনও ছিল না। কাফেররাই তাকে ‘আল আমিন’ উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু নব্যুয়তপ্রাপ্তির পর যখন তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখনই তিনি কাফেরদের শত্রুতে পরিণত হলেন। অতএব যত শত্রুতা ইসলামের বিরুদ্ধে। একথা পরিষ্কার করে বোঝানোর জন্য আর বিশেষ কোনো উদাহরণ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কেন ইসলামের শত্রুতা? ইসলাম মিথ্যা বলা নিষেধ করে, ইসলাম সুদ খাওয়া নিষেধ করে, ইসলাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলে, ইসলাম পাক-পবিত্র থাকতে বলে, ইসলাম মদ-জুয়া নিষেধ করে, ইসলাম নারী-পুরুষের বেহায়াপনায় বাধা দেয়— এসব কারণেই?
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি। জামায়াত-শিবির সম্পর্কে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হোক বা না হোক তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। আর যতদূর জানি, হক্কানি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের আদর্শিক একটা মতপার্থক্য আছে। যদি তাই হয় তাহলে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে অবমাননা কেন? কেন নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের মদতপুষ্ট ও সব সুবিধা ভোগ করা শাহবাগি কথিত গণজাগরণ মঞ্চ ইসলামকে তাদের এক নম্বর টার্গেট হিসেবে দিনের পর দিন আক্রমণ করে যাচ্ছে? কেন আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ধর্ম ও নৈতিকতাবিরোধী ঃধনড়ড় নামক অনুষ্ঠান হধঃরড়হধষ মবড়মত্ধঢ়যু চ্যানেলে দিনের পর দিন সম্প্রচার কথা সত্ত্বেও সরকার তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না? ঃধনড়ড় নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে বার্তা প্রচার করা হচ্ছে তা কোনোভাবেই ধর্ম ও নৈতিকতা সমর্থন করে না। অথচ দিনের পর দিন ধর্ম ও নৈতিকতাবিরোধী ওইসব অনুষ্ঠান শুধু সম্প্রচার করাই হচ্ছে না বরং ওইসব কাজে উত্সাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকার আজ পর্যন্ত হধঃরড়হধষ মবড়মত্ধঢ়যু চ্যানেল শুধু ওই ১ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করার দায়িত্ব অনুভব করল না। যতদূর জানি, বিটিআরসি চাইলেই তা সম্ভব। নৈতিকতার অবক্ষয়ের আরেক নমুনা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য প্রণীত নতুন পাঠ্যবইয়ে যৌনতা ও অশ্লীলতা শিক্ষা। ধর্মহীনতা আর নৈতিক অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্তে ক্রমেই আজ বাংলাদেশ পতিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কি দেশ কোনো দিন উদ্ধার হবে? নাকি পাশ্চাত্যের নগ্ন আধুনিকতার নমুনায় আমার দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম জন্মের পরই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, নয়তো সন্তান-স্বামী ফেলে নারীদের অন্য বন্ধুর হাত ধরে বেরিয়ে যাওয়া অথবা বাবার পরিচয় অবশ্যই জানার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা দেখবে? সুশীল সমাজ বা সচেতন মহলের এমন ঘুরপাক খাওয়া স্বাভাবিক নয়। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। সরকারের অবশ্যই উচিত আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। ঞধনড়ড় নামক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময় হধঃরড়হধষ মবড়মত্ধঢ়যু চ্যানেল বন্ধ রাখা, অবশ্যই উচিত পাঠ্যবইয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা। তা না হলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হব। জাতি হিসেবে আমরা হারাব আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের নৈতিকতা। আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে একটি সোনার বাংলা উপহার দিতে চাই, তবে সরকার অবশ্যই এসব বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.