ভালো ফলের নতুন রেকর্ড

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিবছর নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এবারের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষাগুলোতেও একই বিষয় লক্ষ করা গেল। মোট পাসের হার আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে এবার হয়েছে ৮৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১২ হাজার ১২৯ জন বেড়ে এবার হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৮১। মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ পর্যন্ত স্মরণকালের সেরা ফল করার জন্য উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ার কারণগুলোর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে শিক্ষকেরা বলেছেন, এই পরীক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণীতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা জেএসসি পরীক্ষায় পাস করে এসেছে। ওই পরীক্ষার প্রস্তুতির ফলে তাদের সার্বিক পড়াশোনা এগিয়ে ছিল। এ ছাড়া ওই পরীক্ষা একটি বাছাই প্রক্রিয়া হিসেবেও কাজ করেছে। এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে ভালো ফল করার ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার দুটোই বেড়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতো এবারও ভালো করেছে। বরিশাল বোর্ডে মেয়েদের পাসের হার ছেলেদের চেয়ে বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়া ও শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়ায় এগিয়ে রয়েছে শহরাঞ্চলের নামকরা বিদ্যালয়গুলো। এটি শুভ লক্ষণ নয়। গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা একসময় ভালো ফল করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে প্রকৌশলবিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত। এখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলে শহর-গ্রামের যে ব্যবধান লক্ষণীয় হয়ে উঠছে, তাতে গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের সেই সুযোগ কি এখন হারিয়ে যাচ্ছে? এ বছর ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পরীক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এগুলোর অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
পরীক্ষায় পাসের হার ও ভালো ফলের হার বৃদ্ধি অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। বিশেষত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীরই পরীক্ষায় পাস করা উচিত বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মানও নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। নতুন পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হাওয়ার পর থেকে কয়েক বছর ধরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মান কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে পরীক্ষার উত্তরপত্র ‘উদারভাবে’ মূল্যায়নের ফলে বছরের পর বছর পাসের হার ও ভালো ফলের এমন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এটা সত্য হলে শিক্ষা উন্নয়নের সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ার কথা নয়।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। শিক্ষার উন্নত গুণগত মান সে কারণেই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.