আইন লঙ্ঘন করে প্রচারণা: তামাক কোম্পানিগুলোর শাস্তি দাবি

তরুণ প্রজন্মকে মরণঘাতী নেশা থেকে দূরে রাখতে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতারণামূলক প্রচারণা বন্ধ ও তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দেশের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিদগণ। শুক্রবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত গোলটেবিল সভায় বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানসহ তামাকের নেশায় ধাবিত করতে প্রতারণামূলক প্রচার-প্রচারণা, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, তামাক কোম্পানি কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতার নামে পরিচালিত বিভ্রান্তকর প্রচারণামূলক কার্যক্রম, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি হয় এমন স্থানেও (পয়েন্ট অব সেল) সব ধরনের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ। এছাড়া নাটক-সিনেমাতেও ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু অবিলম্বে এ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।

‘তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধে করণীয়’ বিষয়ক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোজাফফর হোসেন পল্টু।

সভায় আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ আবু নাসের খান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. এম মোস্তফা জামান, দি ইউনিয়নের দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ইশরাত চৌধুরী, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ইসি বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ শিকদার, বাংলাদেশ ডেন্টাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আ ফ ম সারোয়ার প্রমুখ।

জোটের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা’র সঞ্চালনায় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদ্য পাসকৃত আইনের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।

প্রবন্ধে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আইনে তামাকজাতদ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। কিন্তু তামাক কোম্পানির এ ধরণের কার্যক্রমের জন্য তেমন কোন শাস্তি হয়নি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের উপরই করা হয়েছে।

ইশরাত চৌধুরী বলেন, আইন পাসের দাবিতে সারা দেশে বেসরকারি সংগঠনগুলো বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের নেতৃত্বে সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত করেছিলো। এখন আইন বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি প্রশাসন ও জেলা-উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে সহায়তা করতেও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

আবু নাসের খান বলেন, তামাক চাষে দরিদ্র কৃষকদের প্রলুব্ধ করার নামে যে প্রতারণা করছে সেটাও নিষিদ্ধ করতে হবে। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ ও তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করণের নামে বৃক্ষনিধন নিষিদ্ধ করে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

ড. মোস্তফা জামান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নে বেসরকারি সংগঠনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করাসহ আইন সম্পর্কে প্রচারণা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়ন জোরদার করতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, “যে আইনটি আমরা পেয়েছি সেটি পাস করার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেছেন তাদের সকলকে অভিনন্দন জানান। আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে দ্রুত আইনের ব্যাখ্যা সম্বলিত বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি। 

মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা’র সহ-সভাপতি ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. গোলাম রহমান, এডভোকেট আওলাদ হোসেন, গ্রিন মাইন্ড সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. আমির হাসান, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান, পবা নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক আজমল হক হেলাল, সমবায় কর্মকর্তা হরিদাস পাল প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.