অনলাইনের প্রাধান্য প্রমাণিত হয়েছেঃ আসিফ ইকবাল by মনোয়ারুল ইসলাম

আগামী ১০ বছরের মধ্যেই অনলাইন মার্কেটিংকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে সবাই বাধ্য হবে বলে মনে করেন মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ড প্রফেশনাল আসিফ ইকবাল।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু  ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম সেমিনারের এক ফাঁকে বাংলানিউজকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, “আগামী ১০ বছরের মধ্যেই অনলাইন মার্কেটিংকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে সবাই বাধ্য হবে। কারণ অনলাইন মার্কেটিং, অনলাইন মাধ্যম, স্যোশাল মিডিয়ার প্রধান্য এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।”

আসিফ ইকবাল  দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (মার্কেটিং) পদে কর্মরত।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ সময় অতিবাহিত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “এ রকম অস্থির সময়ে কি হবে তা কেউ জানে না। তাই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ও লগ্নি কমিয়ে দিয়েছে। সবার মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করছে। পণ্যের মার্কেটিং ও বিপণন ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। আমদানি রফতানিসহ পুরো অর্থ ব্যবস্থায় ধীরগতি চলছে।”

আসিফ ইকবাল বলেন, “এই ধরনের সমস্যা সমাধানে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। আর অস্থিরতার সময়ে সবাইকে অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। ছুটির দিন, শুক্রবার ও শনিবার কাজ করে বা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি কাজ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে শনিবার বাংকগুলো খোলা রাখলে ভালো হয়। সরকার ও বিরোধীদলগুলোকে আরও সহনশীল হতে হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারি দল ও বিরোধীদলের সংলাপ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে হবে।”

আসিফ ইকবাল আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, “অনলাইন মার্কেটিং ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মার্কেটিং ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। শাহবাগ আন্দোলনের কথাই ধরুন। কিভাবে ফেসবুক ও ব্লগের আন্দোলন দেশকে নাড়া দিলো।”

নতুন ভাবনার ব্যাপারে বলেন, “মার্কেটিং পেশার লোকরা অনলাইনের প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করেছে। অনলাইন ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে অর্থনীতির অনেকাংশকেই প্রতিস্থাপন করবে। তবে দেশে অনলাইন মার্কেটিংয়ে প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে। আমি মনে করি, এখানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এখন পুঁথিগত বিদ্যার দিন শেষ। ইন্টারনেটে ২০ দিনে ২০ বছরের তথ্য জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

আসিফ ইকবাল বলেন, “বাণিজ্য সেক্টরে আইটির ব্যবহারে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোতে আইটি নির্ভরতা ১০০ ভাগ। বাংলাদেশের অনেক সফটওয়্যার এখন বিশ্বে ব্যবহার হচ্ছে। সরকার ও সবার মধ্যে আইটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।” 

বাংক সুদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “উচ্চ সুদ একটা সমস্যা । মনে রাখতে হবে, ব্যবসায়ীরা না বাঁচলে ব্যাংক বাঁচবে না। আবার নিজের ক্ষতি করে ব্যাংক চলতে পারবে না। ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে পারে।”


মার্কেটিং পেশায় নতুন আগমণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “প্রাকটিক্যালি সবসময় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। আড্ডার সময় কমিয়ে দিয়ে জীবনকে তৈরি করার জন্য কাজে যুক্ত থাকতে হবে। মূল্যবোধ তৈরি ও তারুণ্যের জন্য আন্তহীন ভাবনা থাকতে হবে।” 

বর্তমান পরিস্থিতিতেও ভালো ব্যবসা করার কৌশল হিসেবে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন থেকে ও রাজনৈতিক প্রোগ্রামে পণ্য ও সেবার প্রচারণা চালাতে হবে। শাহবাগ আন্দোলনে এভাবে কাজ করেছে অনেক কোম্পানি। আবার বিএনপির লংমার্চেও অনেক কোম্পানি পানি সরবরাহ করে মার্কেটিং করেছে। সময়োপযোগী মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণ করে কোম্পানিগুলোকে টিকে থাকতে হবে।”

আসিফ ইকবাল কর্ম জীবনে দেশ এবং বিদেশে ইউনিলিভার, একটেল (রবি) এবং এসিআইতে বিপণন, বিক্রয় এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি একজন স্বনামধন্য গীতিকার ও সাবেক ক্রিকেটার।

No comments

Powered by Blogger.