কি হতে যাচ্ছে প্রেস ক্লাবে?

উত্তেজনা আর এক ধরনের অস্থিরতা জাতীয় প্রেস ক্লাবে। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরীর একটি ঘোষণাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এ অস্থিরতা। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সদস্যদের প্রশ্ন, কি হতে যাচ্ছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে।
সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন পর এককাতারে শামিল হয়েছিলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনকে ঘিরে সে ঐক্যপ্রচেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙ্গে যায় গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঐক্যপ্রচেষ্টা নাকচ করে প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি স্থাপনের ঘোষণা দেন ইকবাল সোবহান। সেদিন তিনি বলেছিলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্পত্তি বঙ্গবন্ধুর দান। অথচ সেখানে বঙ্গবন্ধুর কোন প্রতিকৃতি নেই। আগামী ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্পত্তি বঙ্গবন্ধুর দান এ বক্তব্য এরই মধ্যে নাকচ করে দিয়েছে প্রেস ক্লাব। প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোন কোন মহল ক্লাবের ইতিহাস বিকৃতি করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। আর এ বিভ্রান্তিকে পুঁজি করে কোন মহল যদি প্রেস ক্লাবকে নিয়ে চক্রান্তের অপপ্রয়াস চালায় তবে ক্লাবের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবেন। এতে বলা হয়, প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সরকার প্রেস ক্লাবকে বর্তমান অবস্থান থেকে শিল্পকলা একাডেমীর জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সদস্যরা সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রেস ক্লাবের বর্তমান জায়গাটি ৩০ বছরের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলেন। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার সরকার বাকি জায়গা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। প্রেস ক্লাবের পুরো জায়গাটিই নামমাত্র মূল্যে এ সময় স্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী এ প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রেস ক্লাবের জায়গা দিয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমীতে। বর্তমানে যেখানে প্রেস ক্লাব রয়েছে সে জায়গা বরাদ্দে বঙ্গবন্ধুর কোন অবদান নেই। প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা কোন যুক্তির কথা নয়। প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের একটি প্রাইভেট ক্লাব। এটি কোন সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নয় যে, এখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করতে হবে। প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকেই অসম্মান করেছেন। নানা দল ও মতের মানুষ প্রেস ক্লাবের সদস্য। তারাও যদি তাদের নেতাদের প্রতিকৃতি প্রেস ক্লাবে স্থাপন করতে চান সেক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তিনি বলেন, প্রেস ক্লাবের একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। কারও যদি কোন প্রস্তাব থাকে তবে সেখানে দেয়াই উচিত। কমিটিতে আলোচনা না করে কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেইতো হবে না। আমি আশা করি, কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রেস ক্লাবের সদস্যরা প্রতিহত করবেন।   এ ব্যাপারে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ২৬শে মার্চের কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করিনি। সুতরাং আমাদের কর্মসূচি বলবৎ আছে। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে কাদা ছুড়াছুড়ি করতে চাই না।
ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায়ই থাকবে। জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াই প্রেসক্লাবের জমি দিয়েছিলেন। এ বক্তব্য প্রত্যাখান করে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এস এম হাবিবুল্লাহ এ নিয়ে প্রেসক্লাবের একটি ম্যাগাজিনে আর্টিকেল লিখেছিলেন। সে আর্টিকেল পড়লেই বুঝা যাবে প্রেসক্লাবের জমি কে দিয়েছিলেন।
ওদিকে উদভুত পরিস্থিতিতে গতকাল প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি জরুরি সভায় মিলিত হয়। সভায় প্রেসক্লাব সদস্যদের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠিও আজ প্রেসক্লাব সদস্যদের দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.