প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে ফিরে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

দেশের সরকার পদ্ধতি ফের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এই মর্মে ছড়িয়ে পড়ছে অন্তহীন গুজব। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে। বলাবলি হচ্ছে অনেকটা নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন।
এক্ষেত্রে তিনি তো ক্ষমতাহীন কোন প্রেসিডেন্ট হবেন না। সর্বময় ক্ষমতা তার হাতে থাকবে- এটা মাথায় রেখেই বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার করলেই সব ঝামেলা মিটে যায়। এতে করে কার্যত একদলীয় শাসন চালু হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজও সম্পন্ন করা হবে। যেটা বঙ্গবন্ধু একদলীয় বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন। ১৫ই আগস্ট সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হন একদল উচ্চাভিলাষী সৈনিকের হাতে। বর্তমান প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে কি ফিরে যাওয়া সম্ভব? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অসম্ভব কেন? শেখ হাসিনা চাইলেই পারেন। তার রয়েছে সংসদে তিন-চতুর্থাংশ আসন। ১৫ মিনিটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা সম্ভব হলে এটা পারা যাবে না কেন? ইচ্ছে প্রকাশ করলেই হয়। এখন তো কার্যত একদলীয় শাসনই চলছে। বিরোধীদের সভা-সমাবেশ নির্বিঘেœ করা যাচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দলের কার্যালয়ে ঢুকে যেভাবে লণ্ডভণ্ড করা হচ্ছে তা দেখে কারও মনে কী এটুকু সন্দেহ আছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে। নিবন্ধিত দলের অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ রয়েছে সার্বক্ষণিক পাহারায়। ১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি ছেড়ে বাংলাদেশ সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রবেশ করেছিল। সবার আশা ছিল এবার বুঝি দেশ গণতান্ত্রিক হবে। বাস্তবে দেখা গেল এর বিপরীত চিত্র। প্রধানমন্ত্রীর হাতে এমন ক্ষমতাই দেয়া হলো যাতে করে তিনি ইচ্ছে করলে পুরুষকে মেয়ে মানুষ বানাতে পারেন। দিনকে করতে পারেন রাত। ২২ বছরে বাংলাদেশ তার মূল্য দিয়ে চলেছে। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের পেছনেও প্রধানমন্ত্রীর হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। যে ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেন না। জনমত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতাকে আলিঙ্গন করেন মহাআনন্দে। আওয়ামী লীগের ভেতরে এখন দুটি মত। কমিউনিস্ট স্তাবকরা মন্ত্রণা দিচ্ছেন, জনরায় নিয়ে আগামীতে ক্ষমতায় আসা যাবে না। তাই নেত্রী যদি প্রেসিডেন্ট হয়ে যান তখন সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ কঠিন হবে না। রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টের তখন কেউ প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন। যেমনটা ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, শাহ আজিজুর রহমান, আতাউর রহমান খান, কাজী জাফর আহমেদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রমুখ। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চায় যারা বিশ্বাসী তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। এমনিতেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ২১ বছর লেগেছে মূল স্রোতে ফিরে আসতে। আবার সে পথে পা বাড়ালে একদিকে দুনিয়া যেমন মানবে না, তেমনি দলের ভেতরেও রক্তক্ষরণ হবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগই লড়াই করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। তিন জোটের রূপরেখার অন্যতম পার্টনার ছিল আওয়ামী লীগ। প্রেসিডেন্টের শূন্যপদ পূরণেও দলটির ভেতরে নানামুখী আলোচনা চলছে। বেশিরভাগের মত হচ্ছে স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদের পক্ষে। নেত্রী এখনও কোন মত দেননি। তার মতই যে আখেরে চূড়ান্ত তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদিও এ মুহূর্তে আরও কয়েকটি নাম আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নাম রয়েছে। এর মধ্য থেকে কাউকে বেছে নেয়া হতে পারে, যদি সরকার পদ্ধতির পরিবর্তনের পক্ষে সিদ্ধান্ত না হয়। আসলে এসবই জল্পনা। অনেক সময় জনমত দেখার জন্য টেবিলের আলোচনা বাতাসে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে নাটকীয় কোন সিদ্ধান্ত যে কোন দিক থেকে যদি হয়ে যায় তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.