বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও বাঙালীর ভবিষ্যত by ইকবাল আজিজ

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে আমি কুষ্টিয়া কলেজে আইএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দেশের রাজনীতির সেই উন্মাতাল দিনগুলোতে অনুভব করেছিলাম, বাঙালী জাতির সংস্কৃতিক বোধ ও রাজনৈতিক বোধ এক হয়ে মিশে গেছে সর্বাত্মক মুক্তির প্রত্যাশায়।
সামান্য কিছু পাকিসত্মানপন্থী দালাল ছাড়া সেদিন সমগ্র জাতি তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সব দুঃশাসনের বিরম্নদ্ধে। ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর অথচ আমরা তখনও সমস্যার একটি শানত্মিপূর্ণ সমাধানের অপেৰায় প্রহর গুনছিলাম। বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পাকিসত্মানী শাসকের বিশ্বসঘাতকতাই আমাদের অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করেছিল। পাকিসত্মান সেনাবাহিনী ও তৎকালীন ইস্ট পাকিসত্মান রাইফেলস-এর সপৰত্যাগী বাঙালী সৈনিকেরা এগিয়ে এসেছিল মুক্তিকামী বাঙালী ছাত্রজনতার পাশে। এর ফলে মার্চ মাসের শেষদিকেই দু'একটি সীমানত্মবতর্ী জেলার সঙ্গে কুষ্টিয়াও ৰণস্থায়ীভাবে স্বাধীন হয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম আমরা হয়ত পাকিসত্মানী হানাদারদের কবল থেকে চিরস্থায়ীভাবে রৰা পেলাম। কিন্তু ক'দিনের মধ্যেই পাকিসত্মানী বাহিনী আবার কুষ্টিয়া শহর দখল করে নেয়। আমি তখন পরিবারের সঙ্গে গ্রামে চলে যাই এবং পুরো জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে অপেৰা করতে থাকি স্বাধীনতার।
১৯৭১ সালে কুষ্টিয়ার বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চল ছিল প্রকৃতপৰে মুক্তাঞ্চল। কিছু দালাল, শানত্মি কমিটি ও রাজাকার ছাড়া বেশিরভাগ এলাকা ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীন বিচরণৰেত্র। এ সময় ভারত আমাদের সহায়তায় সরাসরি এগিয়ে এসেছিল। এ ছাড়া তৎকালীন বৃহৎ শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তার কথাও ভোলা সম্ভব নয়। ১৯৭১ সালে এপ্রিলের শুরম্ন থেকেই হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ অসহায় বাঙালী মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও ত্রিপুরার দিকে যাত্রা শুরম্ন করে। দেশত্যাগী শরণাথর্ীদের বেশিরভাগই ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। পাকিসত্মানী হানাদাররা চেয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মানকে সম্পূর্ণভাবে সংখ্যালঘুমুক্ত করতে। তারা চেয়েছিল বাঙালী জাতি ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের পরিপূর্ণ বিনাশ। সেদিন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি ভারতীয়ের মধ্যে একটি উদ্দীপনা লৰ্য করেছিলাম। তবে সেদিন আমাদের সংগ্রামের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের মধ্যে যে সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখেছিলাম তা বাসত্মবিকই অবিস্মরণীয়। তখন পশ্চিমবঙ্গে ছিল নানা সমস্যা। একে তো সহিংস নকশাল আন্দোলনে বিধ্বসত্ম সেখানকার জনজীবন, তার ওপর ছিল দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পানি ও বিদু্যতের সঙ্কট, বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি হাজার সমস্যা। কিন্তু এত সমস্যার মধ্যেও সামান্য কিছু রৰণশীল ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার বেশিরভাগ বাঙালী সেদিন আমাদের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। শত সমস্যা সত্ত্বেও তারা আমাদের আশ্রয় দিতে কিংবা সহযোগিতা করতে এতটুকু বিরক্ত হননি। অথচ এই বাঙালীদের অনেকেই ছিল ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে বিতারিত। সেদিন অ ামাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙালীদের মধ্যে গভীর ঐক্য স্থাপিত হবে। সীমানত্মের বাধা শিথিল হবে এবং সর্বৰণিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ভেদাভেদকে তুচ্ছ করে দৰিণ এশিয়ায় বাঙালীদের মধ্যে একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক অসত্মিত্ব গড়ে উঠবে।
কিন্তু স্বাধীনতার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আমাদের সব স্বপ্নই ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিসত্মান যুদ্ধের আগে দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে রেলপথে যাতায়াতের যে সুবিধা ছিল, তা দু'টি দেশের মধ্যে তখনও পুনসর্্থাপিত হয়নি। তখন বেনাপোল এবং দর্শনা হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মানের মানুষ ট্রেনে সরাসরি কলকাতায় যেতে পারত কিংবা সেখান থেকে আসতে পারত। পাসপোর্ট-ভিসা ব্যবস্থা তখনও ছিল, কিন্তু তা এত জটিল হয়ত ছিল না। শুনেছি কতর্ৃপৰ পাসপোর্ট-ভিসার কাগজপত্র দর্শনা সীমানত্মে ট্রেনের মধ্যেই দেখে নিতেন, কাউকে ট্রেন থেকে নামতে হতো না। তবে দু'টি দেশের মধ্যকার বন্ধনমুক্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশের কথা আমার এখনও মনে আছে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যনত্ম আমরা ভারতীয় বাংলা ও হিন্দী সিনেমা দেখেছি। তবে সেই সময়ের পাকিসত্মানী বাংলা বা উদর্ু ছায়াছবি ভারতে প্রদর্শিত হতো কিনা জানি না। তবে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর থেকে দুটি দেশের মধ্যে যাতায়াত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় সিনেমা, পত্রপত্রিকা ও বইয়ের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে পত্রপত্রিকা ও বই আসছে। কিন্তু এখান থেকে বই ও পত্রিকা যাওয়ার ৰেত্রে নানান অসুবিধা। আর দুই বাংলার মধ্যে প্রতিবছর কিছু সুনির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের বিনিময় এখনও সম্ভব হয়নি। এর কারণ কি? ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কি দুই অঞ্চলের বাঙালীর মধ্যে 'বিশেষ সম্পর্ক' স্থাপনকে সুনজরে দেখে না? বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর এখানে স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের ৰমতা কুৰিগত করেছিল। তারা এখানে 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' নামে একটি নব্য পাকিসত্মানী জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গের দু'একজন রৰণশীল বর্ণবাদী বাঙালী হিন্দু পূর্ববঙ্গের বাঙালীদের জন্য 'বাংলাদেশী' পরিচয়টি উদ্ভাবন করেছিলেন। আনন্দবাজার গোষ্ঠীর সনত্মোষ কুমার ঘোষ ছিলেন তাদের অন্যতম। বিএনপির প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাদের এই বিষয়ে আশ্চর্য ঐক্য পরিলৰিত হয়। আসলে ভারতের বিজিপিপন্থী বাঙালী বুদ্ধিজীবী এবং বিএনপিপন্থী বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সব সময় চিনত্মার ঐক্য পরিলৰিত হয়েছে। এ কারণেই আমরা লৰ্য করেছিলাম, ১৯৭১ সালে রৰণশীল বাঙালী-হিন্দু বুদ্ধিজীবী নীরদ চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসু কখনোই বিজিপি সমর্থক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান সংগঠক ও বাঙালীর বিংশ শতকীয় সাংস্কৃতিক বোধের অন্যতম নির্মাতা। কিন্তু তারও একটি ধারণা হয়েছিল, পূর্ববঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ শুরম্ন হলে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বহির্প্রকাশ ঘটতে পারে। এটা ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিসত্মানে যে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরম্ন হয়েছিল, সে বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বাঙালীদের আবেগ ও উচ্ছ্বাস ছিল খুবই স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু বুদ্ধদেব আমাদের গৌরবময় মুক্তিসংগ্রাম সমর্থন করেননি। এৰেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে নিঃসন্দেহে প্রতিক্রিয়াশীল বলে অভিহিত করা যায়। বুদ্ধদেব বসু ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ কলকাতা থেকে তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা দয়মনত্মী সিং বসুকে (রম্নমি) লিখেছেন, "পূর্ব বাংলা বিষয়ে, দুঃখের বিষয়, আমি প্রদীপের উৎসাহে যোগ দিতে পারছি না। এ থেকে পশ্চিবাংলায় এক নতুন দুর্যোগ দেখা দিতে পারে, সত্যি বলতে তার লৰণ এখনই দেখা দিয়েছে, এখনই রব তোলা হচ্ছে পশ্চিমবাংলা 'বিদেশী কর্তৃক শাসিত'_ যে কথা আমার মতে মারাত্মক। ব্যক্তিগত কারণে, আর উপায়নত্মর নেই বলেও, আমি আজকের দিনের দুঃসহ কলকাতায় বাস করছি_ কিন্তু যেমন বাংলাদেশ তেমন ভারতবর্ষ আমার কাছে অতি সত্য; ভারতবর্ষ ও হিন্দু ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমি নিজের অসত্মিত্ব কল্পনা করতে পারি না। 'হিন্দু' বলতে 'সাম্প্রদায়িক' কিছু ভাবিস না_ তোর এলিয়ট যে অর্থে হিন্দু আমিও সেই অর্থেই, এবং এলিয়ট যে-কারণে শেষ পর্যনত্ম খ্রিস্টান, আমিও সেই কারণে শেষ পর্যনত্ম হিন্দু। যেটা হওয়া উচিত ছিল, যে কোন সভ্য দেশে যা হতো, তা এই দু'দেশের স্বাতন্ত্র্য সম্পূর্ণ মেনে নেবার পরে মৈত্রী ও ব্যবসায়িক অন্যসব বিনিময়। 'দুই বাংলা এক হোক'_ একথা যেন আমরা না বলি; আমরা বলব_ 'ভারত পাকিসত্মানের মৈত্রী চাই'_ সেটাই সত্য পথ ও ফলপ্রসূ পথ।" উদ্ধৃত অংশটি যে আমার প্রিয় লেখক বুদ্ধদেব বসুর স্বহসত্মে লেখা_ তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়; কিন্তু সত্য চিরকালই কঠিন বাসত্মবতা। বুদ্ধদেবের কন্যা দয়মনত্মী বসু সিং সম্পাদিত 'বুদ্ধদেব বসুর চিঠি' বই থেকে বুদ্ধদেব বসুর চিঠির এ অংশটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। কিন্তু এ চিঠির কথা আমরা জানতে পেরেছি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় তিন যুগ পরে। নীরদ চৌধুরী বা বুদ্ধদেব বসুর মতো কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ ছাড়া ১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গের বাঙালীদের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গে যে উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখেছি, তা আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব নানা কারণে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিকশিত হতে পারেনি।
স্বাধীনতার প্রায় ৩৯ বছর পরে ২০১০ সালের সূচনালগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর বাসত্মবিকই একটি নতুন দিগনত্মের উন্মোচন করেছে। আমরা যেন সেই ১৯৭১ সালের তৎকালীন ভারত সরকারের উষ্ণ সমর্থন ও সহমর্মিতা নতুনভাবে অনুভব করেছি। দু'টি দেশই রাজনীতির কূটকৌশল পরিহার করে একে অপরের কল্যাণের লৰ্যে এগিয়ে এসেছে। আমরা চাই, নিদেনপৰে ১৯৬৫ সালের আগে ভারতের সাথে যে সহজ সম্পর্ক ছিল, তা পুনরায় পুনসর্্থাপিত হোক। বুদ্ধদেব বসু দুই বাংলার সম্পর্কের ৰেত্রে যে শঙ্কার প্রকাশ করেছিলেন, তার কোন বাসত্মবতা নেই। তবে বাংলাদেশের বাঙালী ও ভারতীয় বাঙালীদের মধ্যে একটি সর্বৰণিক ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপনে বাধা কোথায়? নিদেনপৰে ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিবঙ্গ, আসাম, ঝাড়খ- ও ত্রিপুরার বাঙালীদের একটি 'বিশেষ বন্ধুত্ব' গড়ে উঠতে পারে। এর ফলে দৰিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২৭ কোটি বাঙালী নানাভাবে উপকৃত হতে পারে। আর একারণে ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এতটুকু ৰুণ্ন হওয়ার অবকাশ নেই। লৰ্য করেছি, প্রায়শই বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন সেখানকার বাঙালী কূটনীতিকরা। সুবিমল দত্ত বা সমর সেনের কথা আমাদের এখনও মনে আছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনার ছিলেন পিনাক রঞ্জন চক্রবতর্ী। তার পৈত্রিক নিবাস ঢাকার বিক্রমপুরে। পিনাক রঞ্জনের সঙ্গে দু'তিনবার কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। লৰ্য করেছি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি দু'টি দেশের বাঙালীদের মধ্যে আত্মিক বন্ধুত্ব জোরদারের বিষয়ে তিনি আগ্রহী ছিলেন।
অতীতের দাঙ্গা কিংবা ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমাদের শিৰা নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মতো ঝাড়খ- ও আসাম রাজ্যেও বাংলা অন্যতম সরকারী ভাষা। এই চারটি রাজ্যেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার স্থাপিত হতে পারে। সেখানে বাংলাদেশের বইপত্রে একটি বিরাট বাজার গড়ে উঠতে পারে। এ কথা ভুললে চলবে না, আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলাকে অন্যতম সরকারী ভাষা করার দাবিতে কিছু মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তবে দুঃখের বিষয়, ভারতের কোথাও বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল দেখানোর অনুমতি নেই। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এ অঞ্চলে বাঙালীদের একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক বন্ধন গড়ে তোলার লৰ্যে অবিলম্বে সব কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে দিতে হবে। কাঁটাতারের বেড়া কেবলমাত্র দু'টি দেশের মধ্যকার বিভেদকেই জাগ্রত রাখবে। আর সেই সঙ্গে তা কেবলমাত্র কিছু রৰণশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের কায়েমী স্বার্থকে সংরৰণ করছে। ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা জোরদার হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে দু'টি দেশের অভিন্ন হৃদয় বাঙালীরা। প্রায় দু'হাজার বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বাঙালীদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের ভিত গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মানচিত্র প্রতি শতাব্দীতে বদলায়। কিন্তু ভাষাগত জাতীয়তাবাদ চিরস্থায়ী। এই ভাষাগত ঐক্যের ভিত্তিতেই বাঙালীর আগামীদিনের নতুন ইতিহাস সৃস্টি হবে।

No comments

Powered by Blogger.