সংসদে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ দাবি করেছিল বিএনপি- ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ দাবি জানান বিএনপি এমপিরা

 ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। একটি ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দায় ফেটে পড়ছে পুরো সংসদ। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে জাতীয় স্বার্থে ওই দলের রগকাটা রাজনীতিকে ধিক্কার জানাচ্ছেন।
তৎকালীন শাসক দল বিএনপি এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যদের একমত পোষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনাটির জন্ম হয় সেদিন। জামায়াতের বিএনপি গ্রাসের আগে বিএনপির সেদিন জামায়াতবিরোধী বক্তব্যের দালিলিক প্রমাণ হয়ে আছে সংসদের প্রসিডিংসে।
তবে সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। সেদিন সংসদে বিএনপি জোর গলায় বলেছিল, 'বিএনপি কখনও জামায়াতের সঙ্গে অাঁতাত করতে পারে না।' 'খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন জামায়াত-শিবির চক্র নারকীয় হত্যাকা- ঘটিয়ে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে চাইছে।' আর আজ বিএনপির গলায় জামায়াতের মালা। ২০০১ সালে ৰমতায় আসার জন্য জামায়াতকে শরিক বানিয়ে এখন গলায় আটকে যাওয়া কাঁটার মতো বহন করছে বিএনপি। সেদিন সংসদে বিএনপি ঘোষণা দেয় 'জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের প্রসত্মাব সংবিধান দিয়ে ভাল করে পরীৰা করার অবকাশ আছে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিধ্বনি করে সংসদ এ ব্যাপারে দৃঢ় ঘোষণা দেবে এবং সরকার দৃঢ় পদৰেপ নেবে।'
রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের মতে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। বিএনপির কাঁধে ভর করে ৰমতার অংশীদারিত্ব পেয়ে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার বড় শক্তি অর্জন করেছে জামায়াত। আর এ জামায়াতের কারণেই বিএনপি ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে জামায়াতের রাজনীতিতে। এ কারণেই সম্প্রতি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তা-বে শিৰাঙ্গনে হত্যাযজ্ঞ ঘটে গেলেও নীরব থেকেছে বিএনপি। এখন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীকেই সংগঠনকে শিবিরমুক্ত রাখার দাবি জানাতে হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, যেদিন থেকে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গী করেছে সেদিন থেকে নৈতিকভাবে স্খলন হয়েছে দলটির।
সাড়ে ষোলো বছর আগে ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সংসদ প্রসিডিংস ঘেঁটে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর রগকাটা রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে সংসদে। বিরোধী দলের আনা মুলতবি প্রসত্মাবের ওপর ধারা ৬২ অনুযায়ী আলোচনায় অংশ নেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর সভাপতিত্বে আলোচনার সূত্রপাত হয়। প্রথমে ডেপুটি স্পীকার হুমায়ুন খান পন্নী এবং পরে স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর সভাপতিত্বে রাত ৮টা ২০ মিনিটে আলোচনা শুরম্ন হয়। শেষ হয় রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে। চার ঘণ্টার আলোচনায় অংশ নেন ৩২ সংসদ সদস্য। সরকারের পৰে সংসদ উপনেতা ডা. বদরম্নদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল আলী মৃধা, মশিউর রহমান, আশরাফ হোসেন, শাজাহান ওমর, ফরিদা রহমান, আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান, আলমগীর কবির, মেজর (অব) আখতারম্নজ্জমান, সিরাজুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট খায়রম্নল এনাম, জিয়াউল হক, শাহজাহান মিঞা, শিৰামন্ত্রী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় উপনেতা আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ, তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, শামসুল হক, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব) শওকত আলী, আজিজুর রহমান মিঞা, গণতন্ত্রী পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন), ইসলামী ঐক্যজোটের ওবায়দুল হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (পরে বিএনপিতে যোগ দেন), জাতীয় পার্টির এবাদুর রহমান চৌধুরী, আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী, জাসদের শাজাহান সিরাজ (পরে বিএনপিতে যোগ দেন)।
আলোচনা কোন্ ধারায় শুরম্ন হবে তা নিয়ে শুরম্নতে সরকারী ও বিরোধী দলে তুমুল বিতর্ক হয়। রাজশাহীর ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় শিবিরের হাতে নিহত হয় সাতৰীরার বিএনপি মহিলা দলের সভানেত্রী হেলেনা চৌধুরীর ছেলে ছাত্রদলকমর্ী জোবায়ের চৌধুরী রীমু।

No comments

Powered by Blogger.