‘একই সঙ্গে বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক বিনোদ বিহারী চৌধুরী’

 ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তি দেশপ্রেমিক বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। সোমবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মুক্তমঞ্চে ইতিহাসের অনন্য অধ্যায় এই মানুষটির ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গুণীজনদের কথামালার সঙ্গে অনুষ্ঠানে বিনোদ বিহারী চৌধুরীর বিপ্লবী জীবনের অংশবিশেষ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র সূর্যসাথী প্রদর্শিত হয়। ২২ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন আকতারুল ইসলাম জিন্নাহ্। আর অনন্য এ জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ডকুফ্রেম। আয়োজনের শুরুতেই গান ও নাচের মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হয় বিনোদ বিহারী চৌধুরীকে। এরপর তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের আলোচক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আর ক্রেস্ট ও জন্মদিনের উপহার তুলে দেন সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই বিপ্লবীকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছা পর্ব শেষে প্রজ্বলন করা হয় ১০৪টি মোমবাতি। এরপর ছিল আলোচনা। এতে আরও অংশ নেন কবি বেলাল মোহাম্মদ, রানা দাশগুপ্ত, আবেদ খান, স্বপন গুহ ও আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন আবুল কালাম ্আজাদ।
১০৪তম জন্মবার্ষিকীর প্রতিক্রিয়ায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী। বয়সকে যেন হার মানানো শতবর্ষ পেরোনো বিপ্লবীর কণ্ঠে উঠে আসে গান। গেয়ে যান ‘এ লভিনু সঙ্গ তব/সুন্দর হে/সুন্দর হে। এরপর তাঁর কথায় আসে দেশকে ভালবাসার কথা। বলেন, দেশকে কী করে ভালবাসতে হয়, কেমন করে মানুষকে আপন করতে হবে এই বোধটি ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। ১৯৩০ সালে এই বোধ থেকেই চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেও দেশকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তবে বর্তমানে দেশের অবস্থা দেখে দুঃখ হয়। মনে হয়, ব্রিটিশ আমলে মানুষ যেমন কষ্টে ছিল এখনও তেমন কষ্টেই আছে। সামান্য উন্নতি হয়েছে। আর মানবতাবোধ হারিয়ে মানুষ এখন যেন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে। সাহসের সঙ্গে দেশের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমি আশাবাদী মানুষ। নতুন প্রজন্মের মাঝে উদারতা ও ভালবাসার বীজ বপন করতে হবে। অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে হবে। নিপীড়ন-নির্যাতন দূর করতে হবে। কুসংস্কার ও কূপম-কতাকে ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণের কাজ করতে হবে। এরপর সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এই বিপ্লবী বলেন, বছরে একবার হলেও যেন সাধারণ মানুষ ঐতিহাসিক জালাবাদ পাহাড়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাস্টারদা সূর্যসেনের নামে কোন সড়কের নামকরণ করতে হবে।
কামাল লোহানী বলেন, বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর দিকে তাকিয়ে আমরা সাহস সঞ্চয় করতে চাই। তাঁর দেখানো পথ ধরে অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যের সমাজ নির্মাণে কাজ করতে হবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি একইসঙ্গে বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক। সারাজীবন বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করেছেন। দেশপ্রেমিক এই মানুষটি কখনও আপোস করেননি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে ব্যবহার করতে হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর হৃদয়ের আছে গভীর উত্তাপ। যা তিনি সূর্যের আলোর মতোই ছড়িয়ে দেন চারপাশে। তাঁর মতো বিপ্লবী অনুপ্রাণিত করেন নতুন প্রজন্মকে। তাঁর বিপ্লবী চেতনার সাহস ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে।
আবেদ খান বলেন, তাঁর সান্নিধ্য আত্মার শুদ্ধি এনে দেয়। মানুষের জন্যই জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। নিজের জন্য কিছুই করেননি। যে কোন জাতীয় বিপর্যয়ে আজও তিনি অসাধারণ শক্তি নিয়ে সামনে দাঁড়ান। আমরা যখন পথভ্রষ্ট হই, তখন তিনি বাতিঘরের মতো আলোর পথ দেখান। তাই তাঁকে ও তাঁর আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখা সবার দায়িত্ব।
আলোচনা শেষে জন্মদিনের কেক কাটেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী। এরপর দেখানো হয় তাঁর বিপ্লবী জীবনের অংশবিশেষ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র সূর্যসাথী।
প্রয়াণবার্ষিকীতে সেলিম আল দীনকে স্মরণ ॥ বাংলা নাট্য আন্দোলনের অগ্রপথিক ও নতুন নাট্যরীতির প্রবর্তক সেলিম আল দীন। আর এ কীর্তির জন্য তাঁকে ডাকা হয় ‘নাট্যাচার্য’ নামে। সোমবার ছিল তাঁর পঞ্চম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন ও নাট্যদল স্বপ্নদল দিনব্যাপী নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যাচার্যের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ফাউন্ডেশন। আর স্বপ্নদলের দিনের অনুষ্ঠানমালার শুরুতেই ছিল স্মরণযাত্রা। সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন থেকে নাট্যাচার্যের সমাধি অভিমুখে স্মরণ-শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সম্মুখস্থ মৃৎমঞ্চে সেলিম আল দীনের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা অবলম্বনে স্বপ্নদলের ‘ফেস্টুনে লেখা স্মৃতি’ মঞ্চস্থ হয়। সেলিম আল দীনের স্মৃতিকথা অবলম্বনে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন জাহারাবী রিপন। নির্দেশনা উপদেষ্টা জাহিদ রিপন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন সামাদ ভূঞা ও রওনক লাবণী।
বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীতে ছিল স্বপ্নদলের স্মরণের আয়োজন। একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন : নবীন নির্দেশকের দৃষ্টিতে’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এতে সমকালীন উল্লেখযোগ্য নবীন নির্দেশকরা সেলিম আল দীনের নাট্যকর্ম ও শিল্পতত্ত্ব সম্পর্কে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। তাঁদের আলোচনার রেশ ধরে প্রবীণ নাট্যজনরা উপসংহার করেন।
জাদুঘরে বিশেষ প্রদর্শনী ॥ জাতীয় জাদুঘরের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে দুই বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর ও জাহানারা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে রবিবার জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ছিল আলোচনাসভা।
গানে ও কথামালায় আব্দুল লতিফকে স্মরণ ॥ মরমি শিল্পী আব্দুল লতিফ স্মরণে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। মাটির সুর সঙ্গীত পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক ম. হামিদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হাসমত আলী। পরিষদের সভাপতি সুলতান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অগ্রণী ব্যাংকের মহাপরিচালক একেএম শামীম রেজা ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদুল হক।‘

No comments

Powered by Blogger.