আলরাইক- মূল : হর্হে লুইস বর্হেস

আমার এ গল্প আশ্চর্য এক আনন্দানুভূতির অভিজ্ঞতার মতো বাসত্মবধর্মী। ব্যক্তিগত দুলর্ভ স্মৃতির মুখচ্ছবি। রহস্যময় ও আত্মজৈবনিক। কিছুকাল আগে দৈনন্দিন জীবনযাপনের বিবর্তনের কোন এক সন্ধিণে এ ঘটনাটি ঘটেছিল।
আমি জানি, সাহিত্য সম্পর্কিত অভ্যাস হচ্ছে ঘটনার অনুপুঙ্খ বর্ণনা এর সঙ্গে যুক্ত করা। কমবেশি ঘনিষ্ঠভাবে ঘটনাকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। নিউইয়র্ক নগরীতে এ ঘটনাটি ঘটেছিল। সেখানে আলরাইকের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে আমার সাাত ঘটে। রমণীর ডাকনাম আমার কখনও জানা হয়নি। হয়তো ভবিষ্যতে এ সুযোগ আর কখনও ঘটবে না বলে অনুমিত হয়। তার সঙ্গে সাাতের বিবরণ আমি দিতে চাই। এই বিবরণ একটা রাত ও একটা সকালের দিননির্দেশনা দিতে পারে বলে আমি মনে করি। একথা ভেবে আমি স্বসত্মি বোধ করি যে, প্রথমবারের মতো আমি তাকে ইয়র্কমিনিস্টারের ফাইভ সিস্টারে কাঁচের জানালার সার্সির ভেতর থেকে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার মতো করে প্রত্য করি। মনে হয়েছিল, এক সুন্দর মোহন প্রতিমা তার সবটুকু হিরন্ময়ী অহঙ্কার আসত্মস্থ করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয়েছিল ক্রমওয়েলের খোদাই করা কোন ভাস্কর্যের কীর্ণ তাৎপর্য? সেই আমার প্রথম প্রণিধান আলরাইক দেখার ব্যাকুলতা থেকে।
তবে সত্য ঘটনাটি হচ্ছে, সিটি ওয়ালের বাইরে নর্দান ইনের ছোট্ট এক লাউঞ্জে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমরা সেখানে অনেকেই একত্রে ছিলাম এবং আলরাইক আমাদের পেছনে রেখে দাঁড়িয়েছিল। কেউ তাকে ড্রিঙ্ক অফার করলে সে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার অভিব্যক্তিতে ঈর্ষণীয় কাঠিন্য ছিল।
"আমি একজন ফেমিনিস্ট"। সে বলেছিল।
"আহাম্মক পুরম্নষের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। ভণিতা আমার পছন্দ নয়। আমি তাদের তামাক ও এ্যালকোহল ব্যবহার পছন্দ করি না।
তার এ মনত্মব্যে চাতুর্য ছিল। পরে আমার ধারণা হয় যে, এই প্রথমবারের মতো সে এ ধরনের উক্তি করেনি। আমি ল্য করেছি এটি তার কোন ব্যতিক্রমী আচরণ ছিল না। বিশেষ ধরনের কোন বক্তব্য ছিল না। আমরা যেভাবে সবকিছু দেখতে অভ্যসত্ম। এটি সে ধরনেরও কোন বিষয় ছিল বলে মনে হয় না।
সে উলেস্নখ কলেছিল যে, মিউজিয়ামে সে বেশ দেরিতে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারে যে, সে নরওয়েবাসী, তখন তারা তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়েছিল।
"কেউ হয়তো এতে চটে গিয়ে বলে উঠতে পারে যে এই প্রথমবারের মতো কোন নরওয়েবাসী নিশ্চয় ইয়র্কে প্রবেশ করছে না।"
সেটা ঠিক। জবাবে সে বলে, "ইংল্যান্ড একদা আমাদের দেশের অংশছিল এবং আমরা তাকে হারিয়েছি। যদি কারও কিছু অর্জন থাকে যে কেউই তা হারাতে পারে। বস্তুজগতে পরম বলে কিছু হয়তো নেই।"
এভাবেই সে আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। এভাবেই সে আমার উদ্দীপনার প্রাণকণাগুলোকে নাড়িয়ে দিতে পেরেছিল। আমি তার দিকে আকষ্ট আচু তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়েছিলাম। কবি বেস্নক এর একটি পঙ্ক্তিতে পড়েছিলাম কোমল রোপ্য ও কঠিন স্বর্ণসদৃশ এক বালিকার কথা। কিন্তু আলরাইকে ছিল কোমল ও কাঠিন্যের মিশ্র সুন্দরতা। সঙ্কর এক মুগ্ধ বৈশিষ্ট্য। সে ছিল দীর্ঘকায়া ও হালকা পাতলা চেহারার। তার ছিল অত্যনত্ম তী্ন ছুরির মতো দেহাবয়ব এবং একজোড়া ধূসর ছাইরঙা চোখ। তার মুখাবয়ব দেখে নয়, আমি তার মধ্যে এক গভীর শানত্ম সমাহিত রহস্যের ঘ্রাণ পেয়ে লোলুপ হয়ে উঠি। অভিভূত হই। কী অনায়াসে সে হেসে ওঠে। দূরনত্ম উচ্ছ্বাসে। আবার এই হাসির তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে সে এই দল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন এক অদ্ভুত কালো পোশাক সে পরেছিল। তার এই উপস্থিতিই ছিল চাপা স্ফুর্তির মতো বর্ণাঢ্য ও আনন্দময়। এই বৈচিত্র্যহীন ও অনাকর্ষণীয় পারিপাশ্বর্িকতাকে তার উপস্থিতির আশ্চর্য ছন্দ আর রাগিনী মধুর করে তুলেছিল। আলরাইক স্বতঃস্ফর্ূত এক ভঙ্গিতে নিভর্ুল ইংরেজীতে কথা বলছিল। আমি একজন পর্যবেকের বেশি কিছু নই। এ বিষয়গুলো আমি প্রায় নিভৃতে থেকে উন্মোচন করে আমোদিত হতে পেরেছিলাম।
আমরা পরস্পরের সঙ্গে এক আর্ত নিঃস্ব মুহূর্তে পরিচিত হয়েছিলাম। আমি আমার পরিচয় তাকে এভাবে দিয়েছিলাম। আমি বোগোটার আন্দেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। আমি একটু নাতিদীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলাম যে, আমি একজন কলম্বিয়ান। সে একথায় কিছুটা চিনত্মামগ্ন থেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিল, "একজন কলম্বিয়ান হওয়ার বিষয়ে কোন বিশেষত্ব বা ভিন্ন কোন অর্থ আছে কি না?" আমি জানি না। জবাবে আমি বলে ফেলি। "এটি এক ধরনের বিশ্বাস বা জাতিগত কোন আচার মর্যাদার কার্যকারণ হলেও হতে পারে।"
নরওয়েজিয়ান হওয়ার মতো। সে দৃঢ়ভাবে এই সম্পূরক জবাবটুকু দিয়েছিল। সেই রাত্রিতে পারস্পরিক সানি্নধ্যঘন এই হৃদয়ের উত্তাপে দুরনত্ম উচ্ছ্বাসে আরও কি কি কথা হয়েছিল, আজ আর আমার তা স্মরণে নেই। পরদিন ডাইনিং রম্নমে অনেক আগেই আমি নেমে এসেছিলাম। জানালার কাঁচের সার্সির মধ্যদিয়ে বাইরের তুষারপাত দেখা যাচ্ছে। খুব ভোরের অস্পষ্ট আলোর রেখায় সবকিছু ঝাঁপসা হয়ে রয়েছে। আমরা দুজনেই শুধু সেখানে ছিলাম। আলরাইক আমাকে তার টেবিলে আমন্ত্রণ জানায়। সে আমাকে তার কামনার কথা জানিয়েছিল যে, বাইরের নির্জনতায় হাঁটার জন্য তার বড্ড সাধ জাগছে। শোপেন হাওয়ারের একটি কৌতুক আমার মনে হয়েছিল যে, কাজেই আমরা দুজনে হেঁটে যেতে পারি একসনে।
সরাইখানা থেকে বেরিয়ে তুষারপাতের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটতে থাকি। কোথাও কোন আত্মা জেগে নেই। আমি প্রসত্মাব করি যে, আমরা নদীর চালের দিকে কয়েক মাইল দূরবর্তী থরগেট অবধি হেঁটে যেতে পারি। আমি তখন বুঝতে পারি, আমার উপলব্ধি হয় যে আমি আলরাইককে ভালবেসে ফেলেছি। আমি আমাদের পাশাপাশি আর কাউকে প্রত্যাশা করি না। এই তুষার বন্যায় এক ধরনের বর্ণময় উত্তেজনা, এক ধরনের বিহ্বলতা আমাকে গ্রাস কর। ঠিক তখুনি দূরে কোথাও নেকড়ে বাঘের গর্জন আমরা শুনতে পাই। নেকড়ে বাঘের ডাক এর আগে আমি কখনও শুনিনি। তবুও বুঝতে পারি, যে এটি নেকড়ে বাঘের ডাক। আলাইককে নির্বিকার হেঁটে যেতে দেখি। কিছুণ পর গভীর চিনত্মামগ্নভাবে সে বলে, "ইয়র্ক মিনিস্টারে গতকাল আমি কয়েকটি প্রাচীন তরবারি দেখেছি। তরবারি দুর্ভাগ্যের প্রতীক। মৃতু্যর ও হত্যার সঙ্কেতকে মনে করিয়ে দেয়। অসলো মিউজিয়ামের বড় বড় পুরনো জাহাজগুলোর চেয়ে ও এই তরবারিগুলো আমাকে খুব নাড়া দেয়। আমি দেখতে পাই গৌরব ও দীর্ঘশ্বাসরচিত এক নির্জন পটভূমি।"
আমাদের পরস্পরের পথ খ-িত হয়ে যায়। সেই সন্ধ্যায় আলরাইক তার অব্যাহত ভ্রমণে লন্ডনে প্রস্থান করবে। আর আমাকে যেতে হবে এডিনবার্গের পথে। অক্সফোর্ড স্ট্রিটের এই পথে যেতে যেতে সে আমাকে বলেছিল, "আমি ডিকুয়েন্সির পদচিহ্ন ল করে এনের সন্ধানে যেতে চাই, যা লন্ডনের জনতার যাত্রাপথের কোথাও অদৃশ্য রয়েছে।"
ডিকুয়েন্সির দিকে দৃষ্টিপাত আমি কবে কখন যেন থামিয়ে দিয়েছি। আমি উত্তর দেই। "আমার সারাটা জীবন ধরে অনুসন্ধানের কোন তাৎপর্যই তাকে আর কখনও পাইনি।" "হতে পারে, তুমি তাকে খুঁজে পেয়েছ।" আলরাইক বলেছিল, তার কণ্ঠস্বর কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে ওঠে। আমি বুঝতে পারি যে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাকে এক নিষিদ্ধ গুপ্ত জগতের পানে আকৃষ্ট করতে চাইছে। আমি এই আশ্চার্য সত্মব্ধ ধূসর প্রকৃতির মাঝে প্রেম ও ভালবাসার মোহন আঙ্গুলের স্পর্শ টের পাই। যেন এক গভীর গোপন ব্যঞ্জনা ব্যাকুল আকুলতার সমুদ্রবাতাস কোথাও আছড়ে পড়ছে। আমি আলরাইককে নিজের খুব কাছে টেনে নিই। আমি তার মুখ ও চোখে চুমু দেই। সে দৃঢ় অথচ শানত্মভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নির্দেশ দেয়, থরগেট এর সরাইখানায় গিয়ে আমি তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করব। ততণ আমাকে স্পর্শ কর না। এটাই ভাল হবে।"
বহু বছর ধরে অবিবাহিত থাকার পর ভালবাসার এই অঙ্গীকার আমি কখনও প্রত্যাশা করি না। আমি বৈরাগ্যের নিষ্করম্নণ অনত্মরদহন বহুকাল ধরে পালন করেছি। তাই অলৌকিক কোন ঘটনার সম্ভাবনায় এই শর্তারোপ করার অধিকার মেনে নিই। পপায়নে আমার যৌবনের কিছু কিছু ঘটনার স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায়। টেক্সাসে আলরাইকের মতো সুন্দরী ও ছিপছিপে গড়নের এক রমণীর কথা মনে পড়ে, যে আমার ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমাকে ভালবাসে কি-না একতা জানার জন্য আমি আলরাইককে জিজ্ঞাসা করার মতো ভুল করি না। আমি বুঝতে পারি যে, এটি তার প্রথমবার বা শেষবারের মতো কোন বিরল ঘটনা ছিল না। তবে এই রোমাঞ্চ, এই মুখর সমুদ্র উচ্ছ্বাস আমার কাছে ছিল এক অসত্মিম প্রেরণার মতো। এটি এমন এক সুন্দর বহুকথিত ঘটনার মতো যা ইবসেনের নাট্যানুরাগীদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সব কিছু রহস্যময় এক স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এবং আমি কখনও স্বপ্ন দেখিনি। এটি সেই রাজার মতো যে কখনও স্বপ্ন দেখেনি, যতণ না এক জাদুকর পিগস্টিতে তাকে মায়াবী স্পর্শে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আলরাইক জবাব দেয়। এরপর সে বলে, "শোনো একটা পাখি এবার গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই গানে সব সজলতা, সব উজ্জ্বলতা, সব ত্যাগ, অনত্মর্গূঢ় ইশারা সবকিছু ফুটে ওঠে।"
এক বা দু মুহূর্ত পরেই আমরা সেই গান শুনতে পাই। এই জায়গাটিতে আমি বলি, "মনে হচ্ছে যে কোন লোক মরে যাওয়ার আগে তার সমসত্ম নিয়তি ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে।"
এবং আমি মরে যাচ্ছি। এক আশ্চর্য মৃতু্যর আবর্ত নীল মেঘ দিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলছে। সে বলে।
আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকাই। "চলো আমরা ওই বনের মধ্যদিয়ে যাই।" আমি তাড়া দেই। "তাহলে আমরা দ্রম্নত থরগেটে পেঁৗছুতে পারব।" অরণ্য বিশাল ও বিপজ্জনক। সে জবাব দেয়। আমরা সেই পতিত ধূসর বর্ণের বিরাণ ভূমির ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে থাকি। এই মুহূর্তটি চিরকালের জন্য স্থায়ী ও ধ্রম্নব হয়ে উঠুক। আমি বিড়বিড় করে বলি, "চিরকাল এমন এক শব্দবদ্ধ যা মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। নিয়তি নিশ্চিত নয়।" আলরাইক জবাব দেয়। এবং এই আবেগ এই অনুভূতিকে আরও মোহন ও কোমল করে দেয়ার জন্য সে আমাকে আমার নাম উচ্চারণ করতে বলে। "জেভিয়ার ওটালোরা।" আমি উত্তর দেই। সে নামটি উচ্চারণ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আমিও তার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হই। "আমি তোমাকে সাইগার্ড নামে ডাকব।" সে মৃদু হেসে জবাব দেয়। "আমি যদি সাইগার্ড হই," জবাবে আমি বলি, "তবে তুমি হবে ব্রাইনহিল্ড।" সে এবার ধীর পদেেপ সাহসীর মতো হাঁটতে থাকে। তুমি সেই বীরত্বগাথাটি জানো। আমি বলি, 'অবশ্যই।' সে বলে, "সেই বিষণ্ন গল্পটি জার্মানরা তাদের মৃত নিয়েলাভের মাধ্যমে নষ্ট করে দিয়েছে। তার সঙ্গে এ ব্যাপারে বিতর্কে না গিয়ে আমি জবাব দেই ব্রাইনহিল্ড, তুমি এমনভাবে হাঁটছো যেন তুমি কামনা করছ যে, শয্যায় আমাদের মাঝখানে একটি তরবারি শায়িত রয়েছে।"
সহসাই আমরা সেই সরাইখানার সামনে এসে দাঁড়াই। এটি আমাকে অবাক করে না যে অন্যান্যগুলোর মতো এটিও একটি নর্দান ইন। সিঁড়ির ওপর থেকে আলরাইক যেন আমাকে ডাকতে থাকে। "তুমি কি নেকড়ে বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছ? ইংল্যান্ডে কোন নেকড়ে বাঘ নেই। তাড়া করো।" উপরের ফোরে উঠে ল্য করি যে, দেয়াল উইলিয়াম মরিসের নির্মাণশৈলীর মতো সাজানো অদ্ভুত মসৃণ। গাঢ় লাল বর্ণের। ফল ও পাখির সমারোহ। জীবন ও মৃতু্যর ফাঁদে যেন অজস্র জাগরণ রেখা অদৃশ্য রয়েছে। আলরাইক সিঁড়ি পথ ধরে উপরের দিকে হেঁটে চলেছে। অন্ধকার সেই ঘরটি নিচু ধরনের। ঢালু বাঁকানো ছাদ। মৃদু-শানত্ম আলোয় আয়নার ভেতরে প্রতীতি যমজ শয্যাটি দেখা যাচ্ছে। মেহগনি কাঠের মসৃণতা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় ধর্মগ্রন্থের সেই আয়নার কথা। আলরাইক পোশাক খুলে নগ্ন হয়। সে আমার প্রকৃত নাম ধরে ডাকে জেভিয়ার। আমার তখন মনে হয় তুষার খুব জোরে জোরে পড়ছে। এবার আমি আর কোন আয়না বা আসবাব দেখতে পাই না। শয্যায় আমাদের দুজনের মধ্যে কোন তরবারি থাকে না। বালির মতো সময় অতিবাহিত হয় গড়িয়ে গড়িয়ে। অন্ধকারে শতাব্দীর মতো প্রাচীন ভালবাসা প্রবাহিত হয়। এবং প্রথম এবং শেষবারের মতো আমি আলরাইকের নগ্ন প্রতিকৃতির প্রতিভূত গ্রন্থ শিল্পীর মতো আবিষ্ট হই। পড়ে থাকে এক দীর্ণ তটভূমি। তাতে লেগে থাকে সৃষ্টির অতলানত্মিক ঝাঁঝ ...।

No comments

Powered by Blogger.