অন্ধকারে একাকীত্বের জীবন ছিলো লানজার!

অন্ধকারে একাকীত্বের জীবন ছিলো অ্যাডাম লানজার। তার মন জুড়ে ছিলো নৃশংসতার অতিকল্পনা (ফ্যান্টাসি)। ভীষণ বাতিকগ্রস্ত এই সদ্য যুবক নিজেকে আড়াল করে রাখতো জগতের আলো থেকে। বাড়ির বেজমেন্টে জানালাবিহীন ঘরে ছিলো তার বাস।
যার চারিধারে সাটা ছিলো সব মারনাস্ত্রের ছবি। ‘কল অব ডিউটি’র মতো রক্ত পিয়াসী সব গেমসে ঠাসা ছিলো কম্পিউটার। দিনভর সেই সব খেলতো লানজা।

মা ন্যান্সি লানজারও ছিলো অস্ত্রের ঝোঁক তাই বাস্তবেও সেগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করার অফুরন্ত সুযোগ ছিলো অ্যাডাম লানজার।

তিনতলা বাড়িটিতে প্রায়শঃই গতায়ত ছিলো এমন একজন প্লামবার এসব কথা জানালেন স্যান্ডিহুডের হতভাগ্য শিশুগুলোর শেষকৃত্যের দিনে।

প্লামবার পিটার ওলাসুক জানালেন ৪ বেডরুমের বাড়িটির ছোটখাটো সমস্যা মেটাতে অনেক বারই তিনি সেখানে গেছেন। কখনো কখনো বেজমেন্টেও যেতে হতো। ওখানে ঢুকলে মনে হতো এটি সত্যিই যেনো একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়ার্ল্ড।

ওলাসুক বলেন, “বাড়িটি অসাধারণ সুন্দর কিন্তু লানজা বাস করতো বেসমেন্টে। আমার কাছে বরাবরই বিষয়টি অদ্ভুত ঠেকেছে। তবে সেখানেও তার সবকিছুই ছিলো। একাধিক কম্পিউটার, বাথরুম, বিছানা, ডেস্ক ও টেলিভিশন। রুমটিতে অবশ্য ছিলো না কোনো জানালা।”

বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে লানজার বড়ভাইও ওই বেজমেন্টেই থাকতেন, জানালেন ওলাসুক।  ভাই চলে যাওয়ার পর অ্যাডাম লানজা ওই রুমে তার আস্তানা গাড়ে। এই বাড়ির দুটি ছেলেই বালক বেলা থেকে ছিলো সামরিক বিষয়ে আগ্রহী। ঘরের দেয়ালগুলোতে তাদের ছিলো নানা ধরনের সামরিক অস্ত্র, সরঞ্জাম ও সমরযানের ছবি।”

আমার ধারনা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগ তৈরি করেছে এমন সবগুলো অস্ত্র-সস্ত্র ও সরঞ্জামের ছবি তাদের সংগ্রহে ছিলো, বলেন ওলাসুক।

প্রতিটি সামরিক ট্যাঙ্কের ছবি নিয়ে একটি বিশাল পোস্টারও লাগানো ছিলো ঘরের দেয়ালে। এই ঘরের ছেলেরা ৪০, ৫০ ও ৬০ এর দশকের সবগুলো আগ্নেয়াস্ত্র ও বন্দুকের নাম বলতে পারতো। আসলে এসব গেমস যারা খেলে তারা অস্ত্র-শস্ত্রের নামগুলো জানতে পারে, বলেন তিনি।

আরও বলেন, স্যান্ডি হুক স্কুলে ২০ শিশু সহ মোট ২৮ জনের মৃত্যুর জন্য আমি নিশ্চয়ই ওইসব গেমসকে দায়ী করবো না। কিন্তু যখনই তারা কোনো ঐতিহাসিক বন্দুকের ছবি দেখতে পেতো বলতো ‘কল অফ ডিউটি’তে আমি এই অস্ত্র ব্যবহার করেছি।

গত শুক্রবার স্যান্ডি হুক স্কুলের পথে রওয়ানা দেওয়ার আগে মা ন্যান্সিকে হত্যা করতে অ্যাডাম লানজা দুটি হ্যান্ডগান, একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে গুলি চালায়। এরপর একটি গ্লোক, একটি সিগ সোয়ার ও একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় বুশ মাস্টার নিয়ে গাড়ি চালিয়ে রওয়ানা দেয় স্কুলের পথে। এসবগুলো অস্ত্রেরই মালিকানা ছিলো তার মা ন্যান্সির।

স্কুলে সে একটি ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে ৬ থেকে ৭ বছর বয়সী ২০টি শিশুকে হত্যা করে। তার গুলিতে আরও নিহত হন স্কুলের ৬ জন নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তা। এরপর সে নিজেই নিজেকে গুলি করে।

ভিডিও গেমস কল অফ ডিউটিতে অস্ত্রের ব্যবহার রয়েছে। এই গেমসের খেলোয়াড়রা সৈনিকের ভ’মিকা নিয়ে একের পর এক শত্রুনিধন করতে থাকে। এই গেসসের সবশেষ সংস্করণ ব্ল্যাক অপস টু বের হয়েছে এবং গোটা বিশ্বজুড়েই এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আসছে ক্রিসমাসে অনেক শিশুরই গিফট-লিস্টে রয়েছে এই গেমসের নাম।

হত্যাযজ্ঞে অ্যাডাম লানজাও পরেছিলো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত পোশাক যা মার্কিন সামরিক বিভাগ বড় বড় অভিযানেই ব্যবহার করে।

সন্দেহাতীতভাবেই টেলিভিশনে শিশুরা যা দেখে তা তাদের আচরনকে প্রভাবিত করে। মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে কিংবা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে এমন দৃশ্য শিশুদের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। কল অফ ডিউটি’র মতো ভিডিও গেম শিশুদের হত্যা ও নৃশংসতার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে।

অ্যাডামের মা ন্যান্সি লানজা সম্পর্কে তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের দাবি সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা এই নারী নিজেকে রক্ষার জন্য বাড়িতে অস্ত্রের স্তুপ বানিয়ে ফেলেছিলেন। হতে পারে মায়ের আচরণে প্রভাবিত হয়েই লানজা ওই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। অথবা হতে পারে বদ্ধঘরে নিজেকে বন্দি রেখে অ্যাডাম লানজা ক্রমেই বাতিকগ্রস্ত হয়ে ওঠে।

মনো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো শিশু একা থাকলে তার মধ্য সামাজিক গুনাবলী ও দক্ষতা গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। ফলে ক্রমেই সে এমন বাতিকগ্রস্ত হয়ে উঠতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.