তদন্ত প্রতিবেদনঃ তাজরীনে নাশকতা হয়েছে, মালিককে শাস্তির সুপারিশ by এস এম আব্বাস

তাজরীন ফ্যাশনস’র মালিক দেলওয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশসহ পাঁচটি চূড়ান্ত এবং ১৬ টি সাধারণ সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির আহবায়ক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন।
সন্ধ্যায় কমিটির আহবায়ক মাইন উদ্দিন খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, “পাঁচটি চূড়ান্ত সুপারিশ এবং ১৬টি সাধারণ সুপারিশ করে প্রতিবেদন নিদিষ্ট সময়ের আগেই জমা দিয়েছি।”

চূড়ান্ত সুপারিশে তাজরিনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা বলে মনে করা হয়েছে। তবে চরম অবহেলাজনিত অমার্জনীয় অপরাধের অভিযোগে তাজরীনের মালিক দেলওয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩০৪ (ক) ধারায় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: তাজরীনের মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার জন্য শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত তৃতীয় সুপারিশে স্বরাষ্ট্র, শ্রম, গণপূর্ত, পরিবেশ ও বন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গার্মেন্টগুলো পরিদর্শন করে শ্রম আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

দেশের যে সব জেলায় এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেব জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালানার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত পঞ্চম সুপারিশে যেহেতু ঘটনাটিতে নাশকতা প্রতিয়মান হয়, সে কারণে নাশকতার মতো ঘটনার হোতা গুপ্ত অপশক্তিকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গত ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ নভেম্বর চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকারকে আহবায়ক করে গঠন করা এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- শিল্পাঞ্চল উত্তরা পুলিশের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র পরিচালক (প্রশাসন) মো. আব্দুস সালাম। আর সদস্য সচিব করা হয় উপসচিব (অগ্নি) সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দারকে।

কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে মাইন উদ্দিন খন্দকার জানিয়েছিলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোপনে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ভ্রাম্যমাণ ব্যাবসায়ী, ফায়ারসার্ভিস ও শিল্প পুলিশের সাক্ষ্য নিয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিনজন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শ্রমিক এবং যারা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেছেন তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

তবে সব শেষে তদন্ত কমিটি স্থানীয় সাংবাদিক, মেডিক্যাল এক্সপার্ট, বিদ্যুৎ এক্সপার্টদেরও মতামত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত  ২৪ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তুবা গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক পালন করা হয়।

এরইমধ্যে নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসহ বিভিন্ন খান থেকে মোট ৬লাখ টাকা করে চেক প্রদান করা হয়েছে। আর বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বেতন ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজিএমই’র মধ্যস্থতায় পুড়ে যাওয়া এ কারখানার কর্মরতদের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.