দুবাইয়ে মানবিক বিপর্যয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক- পানির ট্যাঙ্কে পাকিদের বিষ! by জাহাঙ্গীর আলম শাহীন

লালমনিরহাট থেকে ॥ জীবন বাঁচাতে দুবাইয়ে প্রায় ৭ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক মরুভূমির গোপন আস্তানায় কয়েক দিন ধরে অবরুদ্ধ। সেখান থেকে সরাতে পাকিস্তানী শ্রমিকরা সুপেয় পানির ট্যাঙ্কে বিষ প্রয়োগ করেছে। যাতে বাংলাদেশী শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে গোপন আস্তানা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।


বুধবার ভোর রাতে এ কথা জানান লালমনিরহাট জেলা শহরের গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোঃ আব্দুল জলিলের পুত্র মোঃ খোরশেদ আলম। সে জীবিকার সন্ধানে ৩ মাস আগে দুবাই গেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ৭ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক দুবাইতেই থাকতে চায়। শুধু তাদের দাবি, দুবাইতে বাংলাদেশী দূতাবাস বা কন্স্যুলেটররা দুবাই সরকারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। পাকিস্তানী শ্রমিকদের অপকর্মের দায় কেন তারা নেবেন! বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রশ্ন, দেশে যখন পাকিস্তানীরা কি ’৭১’র মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে দুবাইয়ে পরিকল্পিতভাবে নেপালী শ্রমিকদের ওপর হামলা করে দাঙ্গা লাগিয়ে বাংলাদেশী হাজার হাজার কর্মজীবী শ্রমিককে দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে যেতে বাধ্য করতে চায় যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বর্তমান সরকার না করতে পারে।
আবুধারি শহর থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে দুবাই শহরের আল হামিম শহরের ভারতীয় মালিকানা কোম্পানি ডট সল্ট। সেখানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুপরিকল্পিতভাবে নেপালী শ্রমিকদের ওপর পাকিস্তানী শ্রমিকরা হামলা চালায়। এ হামলার ঘটনাটি ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন নেপালী, পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী শ্রমিক নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। দুবাই পুলিশ সংঘর্ষ পরিস্থিতি শান্ত করতে শত শত শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। এ গ্রেফতারের মধ্যে আল হামিম শহরের শ্রমিকদের বসবাসের জন্য তৈরি ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর জোনের প্রায় ৩শ’ বাঙালী শ্রমিককে আটক করেছে।
কয়েক হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক গণগ্রেফতার এড়াতে মরুভূমির গোপন আস্তানায় পালিয়ে আছে। দুবাইয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলাদেশী শ্রমিকদের মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। তবে পাকিস্তানীরা বাংলাদেশী শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করছে। জীবন বাঁচাতে মঙ্গলবার রাতে (দুবাইয়ে) ডট সল্ট (ভারতীয় কোম্পানি) থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিক পাকিস্তানী মালিকানা ডিসকন কোম্পানিতে আশ্রয় নিয়েছে। মুসলমান হিসেবে কোম্পানির মালিক বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছিল। দুবাইয়ের শ্রমিক খোরশেদ জানান, বুধবার ভোর রাতে এ কোম্পানিটির সুপেয় পানির ট্যাঙ্কে পাকিস্তানী শ্রমিকরা বিষ প্রয়োগ করছে। যাতে করে বাংলাদেশী শ্রমিকরা পানির অভাবে কোম্পানিটি ছাড়তে বাধ্য হয়। এদিকে খোরশেদ আরও জানান, দুবাইয়ের বাংলাদেশী দূতাবাসের পক্ষে কথা বলতে কয়েক জন ব্যক্তি এসেছিল। তারা কোন সমাধান দিতে পারেনি। ফলে শ্রমিকরা মরুভূমিতে মানবিক বির্পয়য়ের মধ্যে পড়েছে। এদের মধ্যে কয়েক জন নারী শ্রমিক ও কয়েকজন শ্রমিকের শিশুসহ পরিবারের লোকজন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.