বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেই- ০ মসিউরের পদত্যাগ ঝুলে যাচ্ছে- ০ সংস্থাটি এখনও শর্ত পূরণের অপেক্ষায়- ০ ফের এলসিজি বৈঠক ২৩ সেপ্টেম্বর by হামিদ-উজ-জামান মামুন

পদ্মা সেতুর সঙ্কট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো পথে হাঁটছে সরকার। বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব কমাতে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য দাতাদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করা হচ্ছে। ফের ডাকা হয়েছে লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠক।


যদিও বলা হয়েছে, এটি হবে যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্রের (জেসিএস) এ্যাকশন প্ল্যান পাস করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে দাতাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয় সেই চেষ্টা করা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে। বুধবার এ নিয়ে তিনি বলেছেন, পদতাগের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু তাই নয় এ বিষয়ে তাকে কেউ কিছু বলেওনি। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর এক আলোচনাসভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ড. মসিউর রহমান। সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমাকে শাস্তি দেয়া হবে, কিন্তু আমি জানি না আমার অপরাধ কী? এটা অন্যায়। এ ছাড়া অপরাধ বা পদত্যাগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমাকে কেউ কিছু বলেনি। তাঁর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেল।
বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে কোন অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসের একটি সূত্র বুধবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, এখন শর্ত পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বব্যাংক। এটি হলেই বাতিল হওয়া ঋণ চুক্তি পুর্ণর্বিবেচনা হতে পারে। তাই সমস্যা সমাধানে এর বিকল্প নেই।
সূত্র জানায়, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এলসিজি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান নীল ওয়াকার। বৈঠকে বৈদেশিক সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘন ঘন এলসিজি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে ইআরডি পক্ষ থেকে। এর ফলে দাতাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তেমন কোন দুরত্ব সৃষ্টি হয়নি। এর প্রমাণ অর্থবছরের শুরুতেই জুলাই মাসে রেকর্ড অর্থছাড়। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসগুলোতে অর্থছাড়ের পরিমান প্রত্যাশার চেয়েও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, দূরে থাকলে শত্রুতা বাড়ে, ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি , ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান সরকারের পক্ষে জাইকার প্রতিনিধি, কোরিয়া সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ড সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নরওয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, স্পেন সরকার, সুইডেন সরকার, সুইজারল্যান্ডস সরকার এবং ইউনাইটেড কিংডমের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইউনাইটেড নেশনসের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী, ইউনাইটেড স্টেটসের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালকসহ অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিলের পর গত ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশেষ এলসিজি বৈঠক। ওই বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৈঠকে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে দাতাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে অথমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দাতাদের সামনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল সেটিই তুলে ধরা হয় দাতাদের সামনে। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে করণীয় সম্পর্কে তাদের কাছে কোন মতামত নেয়া হয়নি। দাতাদের কাছে আমাদের এবং বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রমের বিষয়ে বিবেচনার ভার তুলে দেয়া হয়েছে। এখন তাঁরা বিবেচনা করে মতামত দিতে পারেন।
ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেননি বিশ্বব্যাংকের কোন প্রতিনিধি। এর কারণ সম্পর্কে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওয়াশিংটনে থাকায় আর কোন প্রতিনিধি অংশ নেননি।
গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে এলসিজির আরও একটি বৈঠক। সেখানে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইআরডির সিনিয়র সচিব ড. ইকবাল মাহমুদ এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন। বর্তমানে মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ্যালেন গোল্ডস্টেইন এলসিজির দায়িত্ব থেকে সরে যান। বৈঠকে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল সেগুলো হলো প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি, বাংলাদেশের ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তার আগে এলসিজি বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা। এছাড়া ওই বৈঠকে ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজ করে বৈদেশিক অর্থ ছাড় দ্রুত করতে এক সঙ্গে কাজ করতে সরকার ও দাতারা সম্মত হয়েছিল।
তারও আগে চলতি বছরের শুরুতে গত ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এলসিজির বৈঠক। ওই বৈঠকে বৈদেশিক অর্থ ছাড়ের বিষয়ে যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে উভয় পক্ষ মিলে একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল।
সূত্র জানায়, পুরো অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থ ছাড়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ মনে করছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করবে দাতারা।

No comments

Powered by Blogger.